যারা বিশ্বের শীর্ষ ধনী, যাদের সব কিছু আছে, তারা আর নতুন কি চায়? উত্তর হতে পারে, এরা সবাই যেন কোন না কোন নামকরা সংবাদপত্র বা সংবাদ সাময়িকীর মালিক হতে চায়। এক্ষেত্রে সর্বশেষ উদাহারণ হচ্ছেন মার্কিন ধনকুবের মার্ক বেনিওফ এবং তার স্ত্রী। দুজনে মিলে কিনে নিয়েছেন পৃথিবীখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন। মিস্টার বেনিওফ হচ্ছেন বিজনেস সফ্টওয়্যার কোম্পানি সেলসফোর্স ডট কমের মালিক। তিনি যুক্তরাষ্ট তথা বিশ্বের সবচেয়ে নামকরা এই সংবাদ সাময়িকী কিনে নিয়েছেন ১৯ কোটি ডলারে।
তার আগে আমাজনের মালিক জেফ বেজোস কিনে নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা। ঐ একই বছরে আরেক মার্কিন ধনকুবের জন হেনরি কিনেছেন বস্টন গ্লোব পত্রিকা।
এরকম উদাহারণ সাম্প্রতিক সময়ে আরও অনেক। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের বিধবা স্ত্রী লরেন পাওয়েল আটলান্টিক ম্যাগাজিনের সংখ্যাগরিষ্ঠ শেয়ার কিনেছেন। বায়োটেক বিলিওনিয়ার প্যাট্রিক সুন শিয়ং কিনেছেন লস এঞ্জেলেস টাইমস সহ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট কোস্টের আরও কয়েকটি নামকরা কাগজ।
বিশ্ব জুড়েই বড় বড় সংবাদপত্রগুলির এখন দুর্দিন চলছে। সংবাদপত্রের সার্কুলেশন কমছে। অনলাইনে বিজ্ঞাপনের জন্য তাদের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে অন্যদের সঙ্গে। কাজেই এই দুর্দিনে বড় বড় ধনকুবেররা যখন বিশাল অংকের টাকা নিয়ে এগিয়ে আসছে, তখন তাতে সাড়া না দিয়ে উপায় থাকছে না তাদের।
মিডিয়া এনালিস্ট কোম্পানি ‘এনডার্স অ্যানালাইস’ এর ডগলাস ম্যাকাবে বলছেন, সংবাদপত্রগুলি এখন বিপুল চাপের মুখে আছে। কারণ তারা শুরুতে অনলাইন সংস্করণ ফ্রি করে দিয়ে ভুল করেছিল। আর এখন ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাবদ তারা যা আয় করছে তা আসলে প্রিন্ট সংস্করণে পাওয়া বিজ্ঞাপন থেকে অনেক কম।
ফলে বিনিয়োগকারীদের কাছে এখন সংবাদপত্র শিল্প আর আগের মতো আকর্ষণীয় নয়। তাহলে বিশ্বের নামকরা ধনীরা কেন এক্ষেত্রে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন? কিসের আকর্ষণে? মিস্টার ম্যাকাবে মনে করেন, অর্থ নয়, নামকরা সংবাদপত্রগুলোর প্রভাব-প্রতিপত্তির আকর্ষণেই তারা এটা করছেন।
“বিত্তশালীরা সবসময়েই সংবাদ মাধ্যমের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। বিশেষ করে সেসব প্রভাবশালী পত্রিকা, যার মাধ্যমে তারা প্রতিপত্তি অর্জন করতে পারবেন।”
তবে বস্টনের নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার অধ্যাপক ড্যান কেনেডি বলছেন, প্রতিপত্তি শুধু নয়, অন্য কারণও আছে সংবাদ মাধ্যম কেনার জন্য ধনকুবেরদের এই আগ্রহের পেছনে। মিস্টার কেনেডি সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বই লিখেছেন, যার শিরোণাম, “হাউ জেফ বেজোস এন্ড জন হেনরি আর রিমেকিং নিউজপেপার্স ফর দ্য টুয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি।”
“আমি বলবো এটি তাদের অহমিকা এবং ভালো কিছু করার সত্যিকারের বিশ্বাস, এই দুয়ের সম্মিলন। এরা মনে করছে এসব সংবাদপত্রের আসলে যেটা ঘাটতি তা হলো আর্থিক বিচক্ষণতা। যদি তারা মালিক হতে পারে, তাহলে এসব সংবাদপত্র আবারও ভালো করবে।”
ওয়াশিংটন পোস্টের বেলায় এই আত্মবিশ্বাস যে ফল দিচ্ছে তাতে সন্দেহ নেই। জেফ বেজোস তার আমাজনকে ব্যবহার করে ওয়াশিংটন পোস্টের গ্রাহক সংখ্যা বাড়িয়েছেন। এটি এখন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে।