ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর হামলাটি ছিল সাজানো!

অনুভব রহমান 
11 October 2024 12:01 am
ট্রাম্পের ওপর হামলা সাজানো : মার্কিন নির্বাচনের আগে এমন ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র বিষয়টি মোটেও নতুন কিছু নয়।

ট্রাম্পের ওপর হামলা সাজানো : মার্কিন নির্বাচনের আগে এমন ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র বিষয়টি মোটেও নতুন কিছু নয়।

মার্কিন নাগরিক ডেসরি। তিনি ‘ওয়াইল্ড মাদার’ ছদ্মনামে অনলাইনে শিশুদের সুস্বাস্থ্য ও লালন-পালনের ওপর ভিডিও তৈরি করেন। কলোরাডোর পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করা এই নারী চান আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতুক। তবে ডেসরির বাড়ি থেকে ৭০ মাইল উত্তরে ডেনভার সিটিতে বসবাসকারী আরেক নারী ক্যামিলি অবশ্য ডোনাল্ট ট্রাম্পকে মোটেও পছন্দ করেন না।

গত দেড় দশক ধরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টিকে ভোট দিয়ে আসা ক্যামিলি চান, সামনের নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট মি. ট্রাম্প হেরে যাক। সুতরাং রাজনৈতিক মতাদর্শের দিক থেকে মার্কিন এই দুই নাগরিকের মধ্যে যে বিস্তর ফারাক রয়েছে, সেটি বোঝাই যাচ্ছে।

কিন্ত মজার ব্যাপার হলো, তারা দু’জনই মনে করেন যে, সম্প্রতি মি. ট্রাম্পকে হত্যার যে চেষ্টা হয়েছে, সেটি আসলে ফেক বা সাজানো ছিল! নির্বাচনে জয়লাভ করার কৌশল হিসেবে রিপাবলিকান পার্টির এই প্রার্থী নিজেই ঘটনাটি ঘটিয়েছেন বলেও ধারণা তাদের।

কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত মতাদর্শের দু’জনের মধ্যেই একইরকম ধারণা কীভাবে তৈরি হলো?

উত্তরটা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

তারা দু’জনই বলেছেন যে, মি. ট্রাম্পের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন সব তথ্য পেয়েছেন, যেগুলো দেখে মনে হয়েছে হামলার ঘটনা দু’টি আসলে সাজানো ছিল। নির্বাচনের আগে অবশ্য প্রার্থীদের বিষয়ে এমন ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্বে’র বিষয়টি মোটেও নতুন কিছু নয়।

বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে নির্বাচনের আগে নানান ধরনের গুজব ও ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আগেও ছড়াতে দেখা গেছে। ডেসরি ও ক্যামিলির কথার সূত্র ধরে এবারের নির্বাচনকে সামনে রেখে ছড়ানো ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বিশেষত প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছড়ানো তথ্যগুলো খতিয়ে দেখেছে।

এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এমন অসংখ্য পোস্ট সাংবাদিকরা খুঁজে পেয়েছে, যেখানে কোনো ধরনের তথ্য-প্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে যে, মি. ট্রাম্পকে হত্যা চেষ্টার ঘটনা দু’টি পুরোপুরি সাজানো ছিল। ওইসব পোস্টের লাখ লাখ ভিউ দেখা যাচ্ছে, অনেকে শেয়ারও দিচ্ছেন।

পোস্টের অনেকগুলোই ছড়ানো হয়েছে ট্রাম্প বিরোধীদের অ্যাকাউন্ট থেকে।

এর মধ্যে বেশ কিছু অ্যাকাউন্ট পাওয়া গেছে যেগুলো দেখে মনে হয়েছে যে, তারা আগে খুব একটা ভুয়া খবর ছড়াননি। তবে নিয়মিতভাবে ভুয়া খবর ছড়ান, এমন অ্যাকাউন্টও দেখা গেছে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এসব গুজব ছড়ানো রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর মালিকানায় থাকা কোম্পানিগুলো কী করছে?

তারা সব সময়ই দাবি করে আসছে যে, ভুয়া ও ক্ষতিকর কনটেন্ট কমানোর পাশাপাশি ব্যবহারকারীকে সুরক্ষায় তাদের নিজস্ব ব্যবস্থা ও গাইডলাইন রয়েছে।

কিন্তু বাস্তবে সেগুলো কতটা কাজে আসছে? বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে এক্সে’র (সাবেক টুইটার) সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো জবাব দেয়নি।

দুই মাসে দু’বার হত্যাচেষ্টা
মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দু’বার হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রিপাবলিকান প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্যে প্রথমবার হত্যা চেষ্টা হয়েছিল গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে।

তখন পেনসিলভানিয়ায় এক সমাবেশে মি. ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন সাবেক এই প্রেসিডেন্ট। তিনি বেঁচে গেলেও হামলাকারীর গুলিতে অন্য এক ব্যক্তি নিহত হন। এছাড়া দু’জন গুরুতর আহতও হন।

হামলার পর হামলাকারীর নাম প্রকাশ করেছিল তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই। বলা হয়েছিল তার নাম থমাস ম্যাথিউ যার, বয়স মাত্র ২০ বছর। অন্যদিকে, হামলার ঘটনার পর সাবেক এই প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ‘সিক্রেট সার্ভিসে’র সক্ষমতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

পরে সমালোচনার মুখে বাহিনীটির প্রধান পদত্যাগ করেছিলেন। এছাড়া বাহিনীর অন্তত পাঁচজন সদস্যকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।

এ ঘটনার দুই মাসের মাথায় আবারও হত্যা চেষ্টার শিকার হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার ওপর হামলার চেষ্টা হয় ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওয়েস্ট পাম বিচ এলাকায় অবস্থিত একটি গলফ ক্লাবে। নিজের মালিকানাধীন ওই মাঠে মি. ট্রাম্প তখন গলফ খেলছিলেন।

তবে তার কোনো ক্ষতি হয়নি। হামলার আগেই ঘটনা টের পেয়ে মি. ট্রাম্পকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। হত্যা চেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে রায়ান ওয়েসলি রুথ নামে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তিকে আটক করে দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ঘটনাস্থল থেকে ‘একে-৪৭’ সদৃশ একটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলেও জানান কর্মকর্তারা। মি. রুথের বয়স ৫৮ বলে জানা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার যে অ্যাকাউন্ট রয়েছে, সেগুলো থেকে জানা যায় যে, তিনি ইউক্রেনের পক্ষে বিদেশি যোদ্ধা সংগ্রহের কাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন।

মি. রুথ ২০২৩ সালে নিউইয়র্ক টাইমসকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন বলেও মার্কিন সংবাদ মাধ্যমগুলোতে খবর প্রকাশিত হয়। সেই খবর থেকে জানা যাচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর তিনি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ইউক্রেনেও গিয়েছিলেন। যদিও তখন তার তেমন কোনো সামরিক অভিজ্ঞতা ছিল না।

পরে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে মি. রুথ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের হয়ে যুদ্ধ করার জন্য স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধা খোঁজার চেষ্টা করেন।

মি. ট্রাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন এমন একজন সিক্রেট সার্ভিস বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা বেরি ডোনাডিও বলেন, মি. রুথের কাছ থেকে যে অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি দিয়ে ৮০০ মিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতেও আঘাত হানা সম্ভব।

সূত্র : বিবিসি