দারুণ ছন্দে ছিল লাতিনের সৌন্দর্যময় ফুটবল উপহার দেওয়া কলম্বিয়া। ফাইনালের দিনও সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। আর্জেন্টিনাকে তারা গোলশূন্য রাখে নির্ধারিত ৯০ মিনিট। এমনকি অতিরিক্ত সময়ের প্রথম ১৫ মিনিটেও গোল আসেনি। ১১২ মিনিটে গোল করে কলম্বিয়াকে স্তব্ধ করে দেন লাউতারো, আবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় আর্জেন্টিনা। অথচ গোটা ম্যাচে অসংখ্য সুযোগ নষ্ট করে কলম্বিয়া।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার কোপা আমেরিকায় ফাইনালের আগে সবচেয়ে ছন্দময় ফুটবল উপহার দিয়েছে কলম্বিয়া। ফাইনালেও বেশিরভাগ সময় দাপট দেখাতে পারছিল তারা। তবে অতিরিক্ত সময়ে লাউতারো মার্তিনেজের গোলে হারতে হয় তাদের। এত কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে না পারার হতাশা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে খেলার মাঠের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি ও ক্লান্তিকে দায় দিয়েছেন কোচ নেস্তর লরেঞ্জো।
ওদিকে টানা তিন বছরে তিন ফাইনাল হারের যন্ত্রণা কাটিয়ে চার বছরের মধ্যে তিনটি বড় ট্রফি জয়- দশ বছরের ব্যবধানে হৃদয়ের পুরনো ক্ষত পুরোপুরি ভোলার সুযোগ পেলেন আনহেল দি মারিয়া। আর শিরোপা দিয়েই তিনি রাঙালেন শেষটা। তাই তো বিদায়ী ম্যাচ খেলে বললেন, এমন অবসরের স্বপ্নই দেখেছিলেন সবসময়।
দি মারিয়াকে ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরী মনে করেন অনেকে।
গত বছর দি মারিয়া ঘোষণা দেন, এবারের কোপা আমেরিকাই হবে আর্জেন্টিনার হয়ে তার শেষ খেলা। আর এই টুর্নামেন্টে একদম শেষ ম্যাচ পর্যন্তই খেলল আর্জেন্টিনা। ফাইনালে কলম্বিয়াকে হারিয়ে তারা জিতল টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৬তম শিরোপা। এর সবশেষ দুটির সাক্ষী দি মারিয়া। এরচেয়ে স্বপ্নময় বিদায় আর কি হতে পারে?
২০২১ সালের কোপা আমেরিকায় দি মারিয়ার একমাত্র গোলেই দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপার খরা কাটিয়ে উঠেছিল আর্জেন্টিনা। পরের বছর বিশ্বকাপ ফাইনালেও দলের তিন গোলের একটি করেন অ্যাটাকিং এই মিডফিল্ডার। মূলত লিওনেল মেসির ছায়া হয়ে যদি না থাকতে হতো, তাহলে মারিয়াই হতে পারতেন দিয়েগো ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসুরী।
এবার যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত কোপার ফাইনালে জালের দেখা পাননি তিনি। তবে ম্যাচ জুড়ে গোটা মাঠে দাপুটে ফুটবল খেলেন সৃষ্টিশীল এই ফুটবলার।
ফাইনালে দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে দি মারিয়াকে তুলে নেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। ৬৪তম মিনিটে চোখ জল নিয়ে লিওনেল মেসি মাঠ ছাড়াতেই হয়তো বিদায়ী ম্যাচে অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারকে আরও বেশি সময় মাঠে রাখেন তিনি।
মেসি-হামেস : লাতিনের দুই নায়ক। একজন জয় তুলে নিলেন ঘরে। অন্যজন ভালো খেলেও মেনে নিলেন পরাজয়।
১১৭তম মিনিটে দি মারিয়া মাঠ ছাড়ার সময় আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে এগিয়ে। সে সময় চোখে জল থাকলেও মনের ভেতর আরেকটি ফাইনাল জয়ের দুয়ারে থাকার তৃপ্তি ও অন্যরকম এক ভালো লাগাই কাজ করছিল তার মনে। ম্যাচ শেষে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেই কথাই বলেন ৩৬ বছর বয়সী তারকা।
দি মারিয়া বলেন, এটি (ভাগ্যে) লেখা ছিল। ঠিক এমনই। আমি এটিরই স্বপ্ন দেখেছি। এভাবেই অবসর নেওয়ার স্বপ্ন দেখেছি। আমার এখন অনেকগুলো সুন্দর অনুভূতি আছে। আমি এই প্রজন্মের কাছে চির কৃতজ্ঞ যারা এসব অর্জন সম্ভব করেছে, যেগুলো আমি খুব করে চেয়েছিলাম।
অথচ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষটা যে এত আলোকিত হলো তার, এর ঠিক বিপরীতটাও দেখেছেন দি মারিয়া। ২০১৪ সালে ফিফা বিশ্বকাপের পর ২০১৫ ও ২০১৬ সালের ফাইনালে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। প্রতিটিরই সঙ্গী ছিলেন দি মারিয়া। তার যন্ত্রণা একটু বেশিই ছিল কারণ চোটের কারণে খেলতে পারেননি ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে।
সেই বেদনাময় সময় পেছনে ফেলে এবার সাফল্যের শিখরে ভাসছেন দি মারিয়া, ভাসছে আর্জেন্টিনাও।