স ম্পা দ কী য়
আপনি যখন ”ক” নিয়ে সংবাদ লিখবেন তখন ক’তেই ফোকাস করবেন; সেখানে ”খ” আসার কথা না। এলে সেটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সাংবাদিকতা বলে বিবেচিত হতে পারে। উপরন্তু বিষয়টি যদি রাষ্ট্র বা এরকম সম্মানজনক বিষয় সম্পর্কিত হয়, তখন আরো খেয়াল করে সংবাদ প্রকাশ করার দাবি রাখে। পৃথিবীর সব দেশেই এটা মেনে চলা হয়। মনে রাখার দরকার আছে, রাষ্ট্র বলতে আওয়ামী লীগ বুঝায় না, বিএনপি বুঝায় না, বুঝায় না সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দল। বুঝায় আমাদেরকেই, আমাদের ১৭কোটি সাধারণ মানুষকেই। তাই সাংবাদিকতার নামে ১৭ কোটি মানুষকে আমরা হেয় করতে পারি না।
এরকম সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতার অভাব অনেক দিন ধরেই। আমরা শুধু মাঝেমধ্যে ছুটছি বস্তুনিষ্ঠতার দিকে। সেটিও আবার নিজেদের স্বার্থের বস্তুনিষ্ঠতা। নিজেদের অনুকূলে আছে, দাও প্রকাশ করে। অনুকূলে নেই, চেপে যাও। যারফলে দেখি একটি ব্যাংক কেলেংকারির সংবাদ। এরপর আর সেই সংবাদের ফলোআপ নেই। কারণটা কি? কারণটা পষ্ট হয় যখন দেখা যায় সেই পত্রিকায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকটির বিশাল বিজ্ঞাপন। এটা সঠিক সাংবাদিকতা নয়। এখানেই চলে আসে দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার কথা। বিডিআর বিদ্রোহের সংবাদ কভারেজের ক্ষেত্রেও এই দায়িত্বশীলতার ঘাটতি আমরা দেখেছি। জাতীয় এই সংকটকে পুজি করে তখন সংবাদ বিক্রি মোটেও সমীচীন ছিল না। লাইভে সেই বিভৎসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ সচিত্র বিবরণ দেখিয়ে জাতি হিসেবে নিজেদেরকেই আমরা ছোট করেছি। সংবাদটি অবশ্যই প্রকাশ করার দরকার ছিল, কিন্তু কতটুকু প্রকাশ করা যেতো সেটা নিয়ে ভাববার দরকার ছিল। দায়িত্বশীল থাকার দরকার ছিল।
বিভৎস খুনের ছবি ও সংবাদ, জঘন্য অপরাধের সংবাদ রসিয়ে রসিয়ে উপস্থাপনে সমাজ বা রাষ্ট্রের কোনো কল্যাণে কি আসে? খুন কি কমে? কমে না, বরং বাড়ে। যদি অপরাধ না কমে, যদি উপকার না-ই হয়; সে-ই সংবাদ দিয়ে কি হবে? বরং দেখতে হবে কতটুকু প্রচার বা প্রকাশ করলে খুন কমে বা অপরাধী নিরুৎসাহিত হয়, পাঠক বা দর্শকও তথ্য পায়— সেই উপায় বের করা। আমরা সেটা পারি না। আমাদের ৯০% ভাগেরই সেই মেধা নেই। ফলে আমরা করি কি, সরকারের বা রাষ্ট্রের সমালোচনা করতে গিয়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় জুড়ে দিই। আবার প্রশংসায় ভাসাতে গিয়ে ক্ষুদ্র উন্নয়নকে বৃহৎ উন্নয়ন বলে লিখে দিই। সাংবাদিকতার বিষয়টা হাস্যকর ক’রে তুলি। এটা কিছুটা বুঝে করি, কিছু না বুঝেই করি। ফলে সরকার বা রাষ্ট্র বুঝে যায় আমরা ফাঁপা পেশার কাঁপা লোক। এমিনকি সরকারের আমন্ত্রণে গিয়ে সংবাদ সম্মেলনকে ”সাংবাদিক সম্মেলন” বানিয়ে ফেলি আমরা। ফলে আমাদের সরকারি ফাপরের মধ্যেই থাকতে হয়। প্রভাবশালীর দৌঁড়ানির ওপরই থাকতে হয়।
সাংবাদিকতাকে এভাবে গৌরবের পেশা থেকে অগৌরবের দিকে নিয়ে যাওয়ার দায় সাংবাদিকদেরই। অন্য কারো নয়।