পিআইবি অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে কল্যাণ অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। ছবি : তথ্য মন্ত্রণালয়।
অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশে সাংবাদিকতাকে জনগণ নতুন করে নতুন রূপে দেখতে চায়। সে জন্য গণমাধ্যমের সংস্কার প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে সরকার গণমাধ্যম সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গণমাধ্যম বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভিত্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দেশ ও জনগণের পক্ষে সব সময় কাজ করবে।
বুধবার ৩০ অক্টোবর প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের (১ম পর্যায়) কল্যাণ অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ সাংবাদিকদের পরিবার ও আহতদের পাশে থাকবে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট। এই আন্দোলনে যেসব সাংবাদিক শহীদ ও আহত হয়েছেন, তাঁরা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের সম্মাননা জানানো হবে।
সাংবাদিকদের অনুদান প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, যেসব সাংবাদিক পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে, সেসব পরিবারকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় নিজেদের অংশ মনে করে। সেই অংশীদারত্বের জায়গা থেকে মন্ত্রণালয় সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সেই কাজের অংশ হিসাবে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম পর্যায়ে ৩৫০ জন সাংবাদিককে কল্যাণ অনুদানের চেক প্রদান করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও বেশিসংখ্যক সাংবাদিককে অনুদান প্রদান করা হবে বলেও উপদেষ্টা আশ্বাস প্রদান করেন।
ফ্যাসিবাদী শাসনামলের সমালোচনা করে উপদেষ্টা বলেন, ওই সময় বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ হয়েছে। যা থেকে গণমাধ্যমও রেহাই পায়নি। ফ্যাসিবাদী সরকার গণমাধ্যমকে অনুগত দাস বানানোর চেষ্টা করেছে। যেসব গণমাধ্যম সরকারের অনুগত ছিল না, তাদের প্রতি নেমে আসতো নানা ধরনের দমন-পীড়ন। উপদেষ্টা গত সরকারের আমলে সাংবাদিকদের উপর দমন-পীড়নের চিত্র জনসম্মুখে প্রকাশের আহ্বান জানান।
সাংবাদিকদের কোনো দলীয় পরিচয় নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের দেশ ও জনগণের জন্য লিখতে হবে এবং কথা বলতে হবে। গণমাধ্যম সরকারের সমালোচনা করবে, জনগণ এমনটাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, গত ১৬ বছরে গণমাধ্যম এই ভূমিকা পালন করতে পারেনি। যেসব সাংবাদিক ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করেছেন, তারা সাংবাদিক নন উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা সাংবাদিকতাকে ব্যবহার করে গণমাধ্যমকে কুলষিত করেছেন। যেসব সাংবাদিক গত সরকারের আমলে নির্যাতিত হয়েছেন, তাঁরাই গণমাধ্যমকে প্রতিনিধিত্ব করেন।
সাংবাদিকদের হয়রানি প্রতিরোধ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা পর্যবেক্ষণের লক্ষ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হলে তিনি এই কমিটিকে জানাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের পাশে দাঁড়াবে।
গণমাধ্যমের কালাকানুন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় যেসব আইন অন্তরায়, সেসব কালাকানুন বাতিলের জন্য পর্যালোচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা বলেন, তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার আন্তরিকতার কারণে খুব কম সময়ের মধ্যে সাংবাদিকদের মাঝে কল্যাণ অনুদানের চেক বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে। সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সাংবাদিকদের সততা, পেশাদারিত্ব ও ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে সরকারের প্রধান তথ্য অফিসার মো. নিজামূল কবীর বলেন, বর্তমান তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। তাঁর নেতৃত্ব দেশ বিনির্মাণের কাজ চলছে। তাঁর মাধ্যমেই সাংবাদিকদের সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ওবায়দুর রহমান শাহীন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাংবাদিক খোরশেদ আলম, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য খায়রুল বাশার, শাহীন হাসনাত, মো. আলাউদ্দিন, মীর মুশফিক আহসান ও সাজিদ আরাফাত।
অনুষ্ঠানে ৩৫০ জন সাংবাদিকের মাঝে মোট ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার কল্যাণ অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।