পারবেন কি ড. ইউনূস

নিজস্ব প্রতিবেদক
11 August 2024 3:30 am
ড, ইউনূসের দিকে তাকিয়ে দেশবাসী।

দেশের প্রধান দুটি দল দেশ পরিচালনায় ব্যর্থ হওয়ায় ড. ইউনূসের দিকে তাকিয়ে দেশবাসী।

আওয়ামী লীগের নেতা শেখ হাসিনার দুঃশাসনের দীর্ঘ আঁধার থেকে মুক্তির আলোর পথে নিয়ে যেতে পারবেন কি  ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গড়ে উঠা তদারকি সরকার? ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এরইমধ্যে শপথ নিয়ে দায়িত্বভার বুঝে নিয়েছে। এখন তাঁর সরকারের করণীয় এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা চলছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতেও। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসানের পর বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে তার সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে পারবে কি না, তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

শনিবার এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যম আল–জাজিরা। ‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার কি অন্ধকার যুগ থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে পারবে’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়েছে। এখন অনেকের ভাবনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহু বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের অন্ধকার যুগ থেকে এই সরকার কীভাবে দেশকে বের করে আনবে। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের পদত্যাগ নিয়েও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমটি।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। আরেকটি গুরুদায়িত্ব হলো, বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক সংস্কার এনে সরকারে জন–আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো। তিনি ও তাঁর সরকার এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা সফল হন, তা–ই এখন দেখার বিষয়।

নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসকে বেছে নেওয়া কেন বাংলাদেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে দ্য ওয়্যার। একই সাথে সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নতুন সরকারপ্রধানের জন্য সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি হলেও ইউনূসের সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। তিনি এমন সময়ে সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নিলেন, যখন দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা নেই।

দ্য ডন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন একটি বাংলাদেশ গড়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব এখন একটি নতুন বাংলাদেশ গড়া।’

আন্দোলনকারীদের দাবির মুখে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতিসহ দেশটির বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রধানদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস। তাতে আরও বলা হয়, ছাত্র–জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো ভারতেই আছেন। তিনি ভারতেই থাকবেন নাকি অন্য কোথাও যাবেন, সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছুই জানা যাচ্ছে না।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ফিরে রাজনীতির হাল ধরার ঘোষণা দিয়েছেন শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বাংলাদেশে নির্বাচনের ঘোষণা এলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার যে দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কেরা জানিয়েছেন, তা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স। প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জন্য তাঁর বিচার দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে এলে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।

দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে লিখেছে, নতুন সরকারের অধীন বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠছেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বহু বছর ধরে গণমাধ্যমে হস্তক্ষেপ ও কড়াকড়ি আরোপ ছিল। তবে নতুন সরকার আসায় এই কড়াকড়ি আর না থাকার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠছেন দেশটির সাংবাদিকেরা।

‘বুলেটের মুখে বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো সেই “শহিদ” আবু সাঈদের বাড়িতে ইউনূস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে আনন্দবাজার পত্রিকা। সংবাদপত্রটির আরেকটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল “‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই’’, তাই হাসিনাকে থাকতে হচ্ছে ভারতে! তবে মুজিবকন্যাকে “আশ্রয়” দিচ্ছেন না মোদি’।