চীন বাংলাদেশের কাছ থেকে যা-ই চায় না কেন, নিজ দেশের স্বার্থ মাথায় রেখে সরকারকে কাজ করতে হবে। ফাইল ছবি
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
গত মাসেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ জুলাই গেলেন চীনে। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা তাঁর দ্বিতীয় চীন সফর। ভারত সফরে শেখ হাসিনা রেল ট্রানজিটসহ বিভিন্ন বিষয়ে দশটি সমঝোতা স্মারক সই করে এসেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত সফরের দুই সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক, উভয়দিক থেকেই বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
জানা যাচ্ছে, এই সফরের মাধ্যমে নতুন বাজেটের ঘাটতি পূরণসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে চীনের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ পাওয়ার আশা করছে দেশটি। গত ১৫ বছরে চীনকে বাংলাদেশের বেশ কিছু মেগা-প্রকল্পে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি বাস্তবায়নকারীর ভূমিকাতেও অবতীর্ণ হতে দেখা গেছে।
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ এবং কর্ণফুলি টানেল তৈরির পর দেশটি এখন তিস্তা প্রকল্পেও যুক্ত হতে চাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে চীন এত আগ্রহ দেখাচ্ছে কেন? এতে তাদের লাভ কী?
এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, এ ক্ষেত্রে পুরো বিষয়টাতে বাংলাদেশের যতটুকু স্বার্থ রয়েছে, চীনের স্বার্থ তাঁর থেকে একটুও কম না। তাছাড়া ভূ-রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকেও চীনের কাছে বাংলাদেশের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে।
চীনা ঋণ ও বিনিয়োগ
বাংলাদেশে চীনের বড় বড় প্রকল্প রয়েছে। অনেক প্রকল্প সমাপ্ত এবং অনেত প্রকল্প চলমান। গত দেড় দশকে এক ডজনেরও বেশি বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ। এসব প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, কর্ণফুলি নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, ঢাকায় বাস র্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্পসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থঋণ দিয়েছে চীন।
বস্তুতঃ চীন এখন বাংলাদেশে শীর্ষ ঋণদাতা দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্যমতে, গত চার অর্থবছরে চীন এককভাবে বাংলাদেশকে প্রায় তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিয়েছে।
আর ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটে’র (এইআই) ২০২৩ সালের এক হিসেবে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ রয়েছে সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, চীনের হাতে এখন পর্যাপ্ত পরিমাণে উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে, যা তারা বিনিয়োগ করার জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবশ্যই তাদের জন্য একটা ভালো অপশন, কারণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে বাংলাদেশ নিজেও ঋণের সন্ধান করছে। আফ্রিকা থেকে শুরু করে এশিয়া, এমনকি ইউরোপেরও বিভিন্ন দেশকে চীন ঋণ দিচ্ছে।
কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় অন্যদেশের তুলনায় বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়াটা তাদের জন্য বেশি লাভজনক বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশকে ঋণ দিয়ে একদিকে তারা সুদের টাকা পাচ্ছে, অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে চীনা ঠিকাদাররাই ওইসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সেইসঙ্গে, বাংলাদেশের উপরেও চীনের প্রভাব বজায় থাকছে।
চীন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশকে যত টাকা ঋণ দিয়েছে, তাঁর সিংগভাগই এসেছে গত দেড় দশকে। মূলতঃ দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংক সরে যাওযার পর চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করে।
বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু তৈরির সিদ্ধান্ত নিলে ২০১৪ সালে সেটির অবকাঠামো নির্মাণের কাজ পায় চীনের চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানি। এরপর চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সফরে আসেন এবং দুই ডজনেরও বেশি প্রকল্পে প্রায় ২১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়ার আশ্বাস দেন।
বস্তুতঃ শি জিনপিং এর ওই সফরের পর থেকেই বাংলাদেশে চীনা ঋণের পরিমাণ দ্রুত বাড়তে দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন বলেন, যেসব প্রকল্পে চীন ঋণ দিচ্ছে, দেখা যাচ্ছে চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলোই সেখানে কাজ করছে। লোকবলেরও একটা বড় অংশ তাদের। প্রায় দেড়শ কোটির মানুষের দেশ চীনে করোনা মহামারির পর ২০২৩ সালে বেকারত্বের হার রেকর্ড সংখ্যায় বেড়েছে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশটিতে ১৬ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে বেকারত্বের হার ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে বলে চীনের সরকারি বলা হয়েছে। কাজেই বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ বিনিয়োগ করার মাধ্যমে চীনের সরকার তাদের বেকার নাগরিকদের কাজের সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, যোগ করেন তৌহিদ হোসেন।
বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে চীনা নাগরিকরাই শীর্ষে অবস্থান করছে বলে সরকারি হিসেবে দেখা যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, অনুমতি নিয়ে কাজ করতে আসা চীনা নাগরিকের সংখ্যা ছয় হাজারের কিছু বেশি বলে উল্লেখ করা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বেশি বলে মনে করেন অনেকে।
বিভিন্নখাত মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় সাতশ চীনা কোম্পানি কাজ করছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (এইআই) বলছে, গত কয়েক বছরে চীনা কোম্পানি গুলো বিভিন্নখাতের নির্মাণকাজের যেসব চুক্তি পেয়েছে, আর্থিক হিসেবে সেগুলোর পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন চীন যদি নিজে ঋণ না দিতো, তাহলে কী তাদের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিকরা চীনা প্রকল্পে এখনকার মতো এককভাবে কাজ করতে পারতো?
বাণিজ্যিক স্বার্থ
আমেরিকান এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটে’র (এইআই) হিসেবে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাৎসরিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যি প্রায় ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। বিশাল এই অঙ্কের প্রায় সবটাই আমদানি করে বাংলাদেশ।
একক দেশ হিসেবে চীনের কাছ থেকেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি পণ্য আমদানি করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, গত ১০ বছরে চীন থেকে পণ্য আমদানি প্রায় তিন গুণ বেড়েছে।
২০১২-১৩ অর্থবছরে চীন থেকে বছরে যেখানে সাড়ে ছয়শ কোটি মার্কিন ডলারের মতো পণ্য আমদানি করা হতো, এখন সেটি বেড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, আঞ্চলিক বিবেচনায় বাংলাদেশ চীনের বড় রপ্তানির উৎস। মূলতঃ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক কারণেই চীনের কাছে বাংলাদেশ বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি চীনের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জামও কিনে থাকে বাংলাদেশ। ২০১৬ সালে চীন থেকে দু’টি সাবমেরিনও কিনেছে দেশটি।
ফলে চীনের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ
অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থের পাশাপাশি ভূ-রাজনীতির কৌশলগত দিক থেকেও চীনের কাছে বাংলাদেশ একটা বাড়তি গুরুত্ব রয়েছে বলে জানাচ্ছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বাড়তি এই গুরুত্বের প্রধান কারণ বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব তৌহিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, সুপার পাওয়ার হতে চাওয়া চীন মূলতঃ এ অঞ্চলে একটা আধিপত্য সব সময়ই রাখতে চায়, বিশেষতঃ বঙ্গোপসাগর এলাকায়। বঙ্গোপসাগরকে চীন যে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়, সেটির প্রধান কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি’। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই স্ট্রাটেজি ঘোষণা করে।
মূলতঃ ইন্দো-প্যাসিফিক বা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ বসবাস করে, যা পণ্যের বাজার হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একইসঙ্গে, সমুদ্র বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি’র শিক্ষক আলী রীয়াজ বলেন, আপনি যদি ২০৪০ সালের হিসাব করেন, তাহলে দেখবেন তখন সারা বিশ্বের জিডিপি’র ৪৫ শতাংশের বেশি এই অঞ্চলে থাকবে। দ্বিতীয় যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হচ্ছে, এই এলাকা দিয়েই মূলত: বৈশ্বিক জ্বালানীর একটা বড় অংশের সরবরাহ অব্যাহত থাকবে।
সেই কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে এই অঞ্চলের জন্য আলাদা কৌশল ঘোষণা করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের আগেই ২০১৩ সালে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নামে একটি উন্নয়ন কৌশল ও কাঠামো উপস্থাপন করেছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে এশিয়া, ইউরোপসহ বিশ্বের ৬০টি দেশের সাথে সড়ক ও রেলপথে সরাসরি সংযুক্ত হতে চায় চীন।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরই) নামের যে মহাপরিকল্পনা নিয়ে চীন বিভিন্ন দেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা চালাচ্ছে, সেটি ঠেকানোর কৌশল হিসেবেই ‘ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজি’ ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এই কৌশলের অংশ হিসেবে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং ভারতকে সঙ্গে নিয়ে একটি নিরাপত্তা জোটও গঠন করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সেটি ‘কোয়াড্রিলেটারাল সিকিউরিটি ডায়ালগ’ (কোয়াড) নামে পরিচিত।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির এ প্রসঙ্গে বলেন, নিজের নিরাপত্তা এবং আধিপত্যের বজায় রাখার স্বার্থেই চীন এখন বাংলাদেশ, মিয়ানমারসহ আশেপাশের দেশগুলোকে নিজের পক্ষে রাখতে চাচ্ছে। ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিতে চীনকে বাদ দিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, ফিলিপাইন, বাংলাদেশ-সহ অন্য দেশগুলোকে সাথে নিয়ে একটি নিরাপদ ‘ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল’ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন ওই জোটে বাংলাদেশ অংশ গ্রহণ করুক, চীন সেটি চায় না।
এ বিষয়ে সতর্ক করে ২০২১ সালের মে মাসে ঢাকায় নিযুক্ত তৎকালীন চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছিলেন, কোয়াডে অংশগ্রহণ চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে “যথেষ্ট খারাপ করবে”। মূলত: বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা বর্তমান সম্পর্ককে আরও গভীর করার মাধ্যমে ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যেতে চায় চীন।
“বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে কীভাবে আরও গভীর করা যায় এবং পারস্পরিক লাভজনক সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাশাপাশি অভিন্ন স্বার্থের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো নিয়ে (আসন্ন সফরে) দুই দেশের নেতারা কথা বলবেন,” বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এরইমধ্যে সাংবাদিকদের বলেছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং।
চীনা মুখপাত্র আরও বলেন, শেখ হাসিনার এবারের সফরের মাধ্যমে দু’দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে চীন।
কিন্তু কীভাবে এবং কোন প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক ‘নতুন উচ্চতায়’ পৌঁছাবে?
এই প্রশ্নের জবাবে মিজ মাও যে পদক্ষেপগুলোর উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দু’টি পদক্ষেপ হচ্ছে, চীনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি মূলনীতি বা পঞ্চশীল চেতনা এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ সহযোগিতাকে এগিয়ে নেওয়া।
অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে সত্তর বছর আগে চীন শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি মূলনীতি ঘোষণা করেছিলো, যার সাথে বৌদ্ধ ধর্মের পঞ্চশীলের মিল রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
সেই পাঁচটি নীতির মধ্যে রয়েছে: সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, হামলা বা আগ্রাসন থেকে বিরত থাকা, একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা ও পারস্পরিক সুবিধা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন যে, নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এ অঞ্চলে আধিপত্য ধরে রাখার ক্ষেত্রে চীনের জন্য এই পাঁচটি মূলনীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে তারা এই নীতির আলোকেই বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সাথে কাজ করে যাচ্ছে।
একইসঙ্গে, চলছে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পকে এগিয়ে নেওয়ার কাজও। মূলতঃ এই প্রকল্পের অংশ হিসেবেই বাংলাদেশের রেল ও সড়কপথ উন্নয়নে ঋণ দিচ্ছে চীন।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উপর নিজের একটি লেখায় ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলছেন, ২০২৩ সালকে চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার বেল্ট অ্যান্ড রোড সহযোগিতাঁর সুফল পাওয়ার মৌসুম হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। কেননা, ওই বছর ডজনখানেক মেগা প্রকল্পের মধ্যে বেশ কয়েকটির কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া বাকিগুলোর কাজেও বেশ অগ্রগতি হয়েছে বলে চীনা রাষ্ট্রদূতের লেখায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চীন বাংলাদেশের কাছ থেকে যা-ই চায় না কেন, নিজ দেশের স্বার্থ মাথায় রেখে আমাদের সরকারের এমনভাবে কাজ করা উচিৎ, যাতে অন্যদেশের সাথে সম্পর্ক খারাপ না হয়। এই অন্যদেশ বলতে মূলত ভারতকেই বুঝাতে চাচ্ছেন তারা।