ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় নিহত পাঁচ জঙ্গির অন্যতম নিবরাস ইসলাম। হামলার ঘটনার সময় অভিযানে সে নিহহ হয়। পরে যখন তার পরিচয় ও ছবি সমাজমাধ্যমে প্রকাশ হয়, অনেক তরুণীর ক্রাশে পরিণত হয় এই নিবরাস! সে ছিলো দারুণ ফুটবল খেলোয়াড়। ফুটবল সে ভালোবাসতো। কিন্তু জঙ্গিবাদের ভুলপথ তাকে অন্ধকারের গলিপথে নিয়ে গিয়ে শেষ করে দেয়।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার। এদিনই বিশ্ব কাঁপিয়ে দেওয়া জঙ্গি হামলা হয় গুলশানের অভিজাত রেস্টুরেন্ট হোলি আর্টিজানে। ওই হামলায় অংশ নেয় নিবরাস। ঘটনার আগে চার মাস ধরে ঝিনাইদহ শহরে অবস্থান করেছিল সে। ঝিনাইদহ শহরের সোনালীপাড়ার একটি মেসে সে ‘সাইদ’ ছদ্মনামে থাকতো। হলি আর্টিজানে হামলার পাঁচ দিন আগে নিবরাস ওই মেস ছেড়ে চলে যায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও স্থানীয় মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান তাঁকে ওই মেস ঠিক করে দেন।
নিবরাসের মতো এই তরুণরা হামলার প্রশিক্ষণ কোথায় নিয়েছিলেন, কাদের সংস্পর্শে ছিলেন- তা তাদের নিখোঁজ থাকার সময়কার অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। নিবরাসের পরিবারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মিলালে দেখা যায়, ঘর ছাড়ার পর তার অবস্থান ছিল ঝিনাইদহে, শহরের হামদহ সোনালী পাড়ায় অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য কওছর আলীর মালিকানাধীন বাড়ির মেসে। ওই মেসের চারটি কক্ষে মোট আটজন থাকতেন। তাদের মধ্যে সাঈদ বা নিবরাসও একজন। ঈদের সপ্তাহ খানেক আগে তারা মেস ছেড়ে যান, তারপর আর ফিরেনি। ঈদের ছয় দিন আগে গুলশানে হামলা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন তরুণ জানান, নিবরাস তাদের সাথে ফুটবল খেলতো। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবে এসবই বলেছিল। কিন্তু তার ইংরেজি বলার ধরনটা অসাধারন ছিল। বেশিরভাগ কথার মধ্যে ইংরেজি চলে আসতো তার। শুরু থেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ে আসা নিবরাসের ফুটবলে আগ্রহের বিষয়টি তার ফেসবুক পাতায়ও উঠে আসে।
চার কক্ষের ঘরটির ভাড়া ঠিক হয় মাসে ২ হাজার ৩০০ টাকা। ইমাম রোকনুজ্জামান তখন বলেছিলেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র থাকবেন। প্রথমে দুজন আসেন। এঁদের একজন সাঈদ (নিবরাস), আরেকজনের নাম বলেন মোস্তাফিজ। কিছুদিন পর আরও ছয়জন আসেন। তাঁদের কাছে মাঝে মাঝে একটি মোটরসাইকেল আসত। রমজানের শুরুতে ছয়জন বাড়ি যাওয়ার কথা বলে চলে যান। বাকি দুজন ২৮ জুন (গুলশান হামলার দুদিন আগে) চলে যান। এরপর আর ফেরেননি কেউ।
ঈদের আগের দিন রাতে ওই মেসে অভিযান চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মেসের মালিক কাওসার আলী, তাঁর দুই ছেলে বিনছার আলী ও বিনজির আলী এবং মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান ও সাব্বির হোসেনকে তুলে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে পুলিশ জানায়, তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো অভিযান হয়নি বা কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়নি।
মেসের মালিক কাওসার আলীর স্ত্রী বিলকিস নাহার জানান, ঝিনাইদহ শহর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে পৌরসভার ৩ নম্বর পানির ট্যাংকি এলাকার সোনালীপাড়ায় তাঁরা বসবাস করেন। তাঁর স্বামী কাওসার আলী সাবেক সেনা সার্জেন্ট। গত চার মাস আগে সাঈদ নামের একটি ছেলেকে এনে মেস ঠিক করে দিয়েছিলেন সোনালীপাড়া মসজিদের ইমাম রোকনুজ্জামান রোকন। সাইদ নামের ওই ছেলেটি গত ২৮ জুন মেস ছেড়ে চলে যায়। হলি আর্টিজানে হামলার পর টিভিতে ছবি দেখে এলাকার অনেকে বুঝতে পারেন, সাঈদ ছদ্মনামের ওই ছেলেটিই নিবরাস ইসলাম।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, সাইদ নামে যে ছেলেটিকে তারা চিনত সে-ই নিবরাস ইসলাম। সে ভালো ফুটবল খেলত, কম কথা বলত, মুখে দাঁড়ি ও সুদর্শন ছিল। টিভির ছবি দেখে তারা ছেলেটিকে চিনতে পেরেছে।