সারোগেসি : বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উদ্ভাবন

বিবিসি
27 June 2024 12:25 pm
সারোগেসি : বিজ্ঞানের বিস্ময়কর উদ্ভাবন

সারোগেসি : বিজ্ঞানের বিস্ময়কর এই উদ্ভাবন বদলে দিচ্ছে সন্তান গ্রহণের প্রচলিত ধ্যনধারনা

ক্যালেন্ডারের হিসাবে এ অঞ্চলে সেদিন ছিল ২২ জানুয়ারি, শনিবার, ২০২২। যদিও আমেরিকায় তখনও দিনটি ছিল শুক্রবার। নেটমাধ্যমে এরইমধ্যে মা হওয়ার খবর জানালেন ২০০০ সালে মিস ওয়ার্ল্ডের খেতাব জেতা প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। লিখলেন, তিনি আর নিক মা-বাবা হলেন। সারোগেসি পদ্ধতিতে। মানে গর্ভাশয় ভাড়া করে! গভীর রাতেও সেই খবর হু হু করে ভাইরাল হয়ে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলল শুভেচ্ছার বন্যা।

এর আগে বলিউডের খ্যাতিমান পরিচালক করণ জোহরও সারোগেসির মাধ্যমে বাবা হয়েছেন। এনিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা চলছিল পুরো মিডিয়া জগতে। শুধু করণ নয়, বলিউডের অনেক নামি দামি অভিনেতা-অভিনেত্রীই সারোগেসির মাধ্যমে পেয়েছেন বাবা-মা হওয়ার স্বাদ।

শুধু বলিউড নয়, গোটা বিশ্বই ঝুঁকছে প্রযুক্তির পেছনে। বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কারের পেছনে। উদ্ভাবনের পেছনে। সারোগেসিও চিকিৎসা বিজ্ঞানের উদ্ভাবন। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলেও এনিয়ে রয়েছে বিতর্কও। কিন্তু সারোগেসি বিষয়টি কী?

একজনের নারীর গর্ভে অন্য দম্পতির সন্তান ধারনের পদ্ধতিকে সারোগেসি বলে। সারোগেসির এই পদ্ধতি বেশ দীর্ঘকালীন। আইভিএফ পদ্ধতিতে স্ত্রী ও পুরুষের ডিম্বাণু ও শুক্রাণু দেহের বাইরে নিষিক্ত করে তা নারীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়।

কেন সারোগেসির প্রয়োজন হয়?   

অনেক চেষ্টার পরও যখন সন্তান লাভের আর কোন পথ থাকে না তখন সারোগেসিই হয় অন্যতম উপায়। তবে এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন—

ক. অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বারবার মিসক্যারেজ হওয়া

খ. আইভিএফ চিকিৎসায় গর্ভধারণ না হওয়া

গ. অকাল মেনোপজ

ঘ. জরায়ুতে অস্বাভাবিকতা বা অস্ত্রোপচারের কারণে বাদ যাওয়া

সারোগেসি দুই রকমের হয়—

এক.

পার্শিয়াল সারোগেসি- অনেকদিন থেকে এটি চলছে। সন্তানধারণে এখানে কোনও ভূমিকাই পালন করেন না মা। বাবার শুক্রাণু আর সারোগেট মায়ের ডিম্বাণু থেকে শিশুর জন্ম হয়।

দুই.

ট্রু-সারোগেসি/জেস্টেশনাল/আইভিএফ সারোগেসি- মায়ের ডিম্বাণু নিয়ে ল্যাবে ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এরপর সারোগেট মায়ের জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয় ভ্রূণটি। এটিই এখন প্রচলিত পদ্ধতি।

পার্শিয়াল সারোগেসি পদ্ধতিতে মহিলার ডিম্বাণু এবং গর্ভ– দুটোই ভাড়া নেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে সন্তানের ওপর মায়ের একটা জৈবিক অধিকার থেকে যায়। অন্যদিকে আইভিএফে মায়ের ডিম্বাণু ‘স্পার্ম ব্যাংক` থেকে আনা অন্য পুরুষের শুক্রাণুর সঙ্গে অথবা বাবার শুক্রাণু ডোনার মহিলার ডিম্বাণু দেহের বাইরে নিষিক্ত করে ভাড়া দেওয়া মহিলার গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়।

যেহেতু গর্ভ ভাড়া দেওয়া মহিলার ডিম্বাণু ব্যবহার করা হয়নি, সেহেতু ভূমিষ্ট সন্তানের ওপর সেই মহিলার কোনো অধিকার বর্তায় না। তবে বাবা-মা`র শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু নিষিক্ত করে যে ভ্রুণ তৈরি করা হয়, তার পিতৃত্ব বা মাতৃত্ব নিয়ে কোনো সংশয় থাকে না। তবে আইভিএফ পদ্ধতিতে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত করাকে টেস্ট-টিউব বেবি মনে করা যাবে না। কারণ টেস্ট-টিউব বেবি ভ্রুণ অবস্থায় মাতৃগর্ভেই বেড়ে ওঠে।