মাঠে-ময়দানে ডেস্ক
বিভীষিকা পিছু ছাড়ছে না সাম্বার দেশ ব্রাজিলের। দীর্ঘদিন ধরে ‘যথাযোগ্য’ কোচ পাচ্ছে না পাঁচবার বিশ্বজয়ী ফুটবল দল সিবিএফ—ব্রাজিল। যে কারণে বারবার হেরেই চলেছে ছন্নছাড়া ব্রাজিল। এ যেন দলের ছায়া! সাবেক কিংবদন্তী ফুটলাররা সমালোচনা করে অনেকে নিজেদের খেলা দেখাই ছেড়ে দিয়েছেন। যেমন কয়েকদিন আগে রোনালদিনহো সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানান দিলেন, তিনি আর এই ব্রাজিলের খেলা দেখেন না।
কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল ব্রাজিল। দুই বছর পর সেই একই ঘটনা যেন ফিরে এল নতুন করে। এবার কোপা আমেরিকার শেষ আটেও টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিতে হলো ব্রাজিলকে। শুধু এই আসরেই নয়, দীর্ঘদিন ধরেই ব্রাজিল হাঁটছে উল্টো পথে।
উরুগুয়ের বিপক্ষে শেষ আটে নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য সমতা থাকার পর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। বিশ্বকাপের মতো এবারও পেনাল্টি শুটআউটে ব্রাজিল হারে ৪–২ গোলে। কিন্তু ব্রাজিল তো এমন দল যারা যে কোনো আসরে যায় শিরোপা জিততে, একক কোনো ম্যাচ জিততে নয়, বা রানার্সআপ হতেও নয়। তাহলে সেই কেন সেই ব্রাজিলের এমন ভরাডুবি? বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ থেকে নির্যাস নিয়ে ব্রাজিলের হারের কারণগুলো বের করে এনেছেন প্রিয়দেশ এর ক্রীড়া বিভাগ।
এক. মূল নায়ক নেই
যে কোনো আসরে ব্রাজিলের বাজির ঘোড়া থাকে। সেটা একজন, দুইজন কিংবা একাধিকও থাকে। এবারের কোপায় চোটের কারণে এক নম্বর বাজির ঘোড়া নেইমার নেই। তিনি না থাকায় ভিনিসিয়ুস জুনিয়রই ছিলেন ব্রাজিলের অন্যতম সেই ভরসার ঘোড়া। কিন্তু সেই ভিনিসিয়ুসই গ্রুপ পর্বের শেষ দুই ম্যাচে কার্ড দেখে কোয়ার্টার ফাইনালের জন্য নিষেধাজ্ঞার খাড়ায় পড়েন। তাঁর না থাকা ব্রাজিলকে নিদারুণ ভুগিয়েছে। বিশেষ করে বাঁ প্রান্তে এদিন ভিনিসিয়ুসকে ব্রাজিলের প্রয়োজন ছিল। চাপের মুখে দারুণ কিছু করে ম্যাচ বের করে আনার সমার্থ্য ছিলো তাঁর।
বিশেষ করে সেরা ছন্দের ভিনিসিয়ুস বিশ্বের যেকোনো প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলতে পারেন। গ্রুপ পর্বে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে সেরা ছন্দে থাকা ভিনিসিয়ুস একাই ম্যাচ বের করে এনেছিলেন। কিন্তু দর্শকদের সারিতে বসে আজ দলকে প্রায় পুরোটা সময় ভুগতে দেখেছেন ভিনি। হয়তো ভাবছিলেন, কলম্বিয়ার বিপক্ষে অপ্রয়োজনীয় সেই হলুদ কার্ডটি না দেখলে আজকের ফলটা অন্য রকম হলেও হতে পারত।
দুই. ক নৈপুণ্যের অভাব
এদিন ব্রাজিলের বিপক্ষে শুরু থেকে শরীরনির্ভর ফুটবল খেলেছে উরুগুয়ে। নিজেদের খেলাটা খেলার চেয়ে যেন ব্রাজিলের খেলা নষ্ট করাতেই বেশি মনোযোগী ছিল তারা। এটি উরুগুয়ের রণকৌশল। এটি স্বাভাবিকই। ফুটবল যুদ্ধে নামলে যে কোনো দলই তাদের কৌশল নেবেই। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে ব্রাজিলের জন্য দরকার ছিলো পাল্টা রণকৌশল বানানো। পাঁচবারের বিশ্বজয়ী দলকে যে কোনো কঠিন অবস্থা থেকে ম্যাচ বের করে আনাই তো সমীচিন কাজ।
তেমন কিছু করতে এদিন ব্রাজিলের প্রয়োজন ছিল একক নৈপুণ্যের প্রদর্শনী। সে জন্য যেকোনো একজন খেলোয়াড়ের এগিয়ে এসে দারুণ কিছু করতে হতো। দারুণ কিছু আক্রমণ, অসধারণ ক্রস কিংবা ফ্রি–কিকে পাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগালে এই ম্যাচের চিত্র বদলে যেতে পারত। কিন্তু রদ্রিগো, রাফিনিয়া কিংবা এনদ্রিকরা তেমন কিছু করতে পারেননি। মাঠে পুরোটা সময় নিজেদের ছায়া হয়ে ছিলেন তারা।
তিন. মানসিকভাবে ভেঙে পড়া
বিশ্বকাপে পেনাল্টি শুটআউটে ব্যর্থ হয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু গত দুই বছরেও পেনাল্টি শটে বিশেষ কোনো উন্নতি করতে পারেনি তারা। এবারও পেনাল্টি নিতে গিয়ে স্নায়ুচাপ সামলাতে ব্যর্থ এদের মিলিতাও এবং দগলাস লুইসরা। মিলিতাওয়ের নেওয়া প্রথম শটটি ঠেকিয়ে দেন উরুগুয়ের গোলরক্ষক রোচেত আর দগলাস লুইস মেরেছেন পোস্টে। পেনাল্টি শুটআউট ভাগ্যের পরীক্ষা হলেও শেষ পর্যন্ত এটি আসলে স্নায়ুচাপ সামলানোর পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় সাম্প্রতিক সময়ে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে ব্রাজিল।
চার. হ-য-ব-র-ল
কোপায় গ্রুপ পর্বের প্রথম দুই ম্যাচে অপেক্ষাকৃত কম শক্তির দলের বিপক্ষে ভালো সমন্বয় দেখিয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু কলম্বিয়া ও উরুগুয়ের প্রেসিং ফুটবলের সামনে সমন্বয় ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে তারা। কলম্বিয়া ম্যাচের মতো এদিনও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ঠিকঠাক পাস দিতে পারেননি ব্রাজিলের খেলোয়াড়েরা। একই সঙ্গে বারবার বলের দখলও হারিয়েছে তারা। প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিল যেখানে ৪০৭ পাসের ৮৬ শতাংশই ঠিকঠাক দিয়েছিল, আজ সেটি নেমে এসেছে ৭৯ শতাংশে।
সামগ্রিকভাবেও সেদিনের চেয়ে উরুগুয়ের সাথে এক শ পাস কম দিয়েছে তারা। যা ম্যাচে ভুগিয়েছে ব্রাজিলকে। এ ছাড়া সুযোগ তৈরি করতেও ব্যর্থ হয়েছে ব্রাজিল। পুরো ম্যাচে মাত্র দুটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে তারা—বলা বাহুল্য, দুটিই মিস করেছে। ধারাবাহিকভাবে সুযোগ তৈরি করতে না পারার কারণে অ্যাটাকিং থার্ডে কোনো হুমকিও সৃষ্টি করতে পারেনি দরিভাল জুনিয়রের দল। নতুন চমক এন্দ্রিকও কিছু করতে পারেনি দলের জন্য। সব মিলিয়ে ছন্নছাড়া এক ব্রাজিল এখন। কবে এই পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসতে পারবে—ভবিষ্যতই তা বলতে পারবে।
সূত্র : গোল ডটকম