মোবাইল ফোন ও ট্যাবলেটসহ নানা প্রযুক্তি শিশুদের জন্য বিরূপ ফল বয়ে আনছে। শিশুদের নানা মনো-দৈহিক সমস্যা সৃষ্টি করছে মাত্রাতিরিক্ত ডিভাইসম্যানিয়া। গবেষকরা এ অবস্থায় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে স্ক্রিন টাইম বেঁধে দিতে বলছেন। যেহেতু বিজ্ঞানের এ যুগে শিশুদের পুরোপুরি ডিভাইসমুক্ত রাখা যাবে না, তাই আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টার বেশি সময় তাদের ডিভাইস ব্যবহার করতে না দেওয়া উচিত।
কিছু জরিপ বলছে, যে শিশুরা শুধুমাত্র খেলা বা বিনোদনের জন্য ফোন, ট্যাবলেট বা কম্পিউটারের পর্দার সামনে প্রতিদিন দু’ঘন্টার কম সময় কাটায় – তারা মানসিক ক্ষমতার পরীক্ষায় ভালো ফল করে।
তার মানে, আট থেকে ১১ বছরের শিশুদের দৈনিক ‘স্ক্রিন টাইম’ সীমিত করার সাথে তার বোধশক্তি উন্নত হবার একটা সম্পর্ক আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪ হাজার ৫শ শিশুর ওপর চালানো এই জরিপটি সম্প্রতি ল্যান্সেট সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে অংশগ্রহণকারী শিশুরা শারীরিকভাবে কতটা সক্রিয়, কতটা ঘুমায়, এবং বিনোদনের জন্য কত সময় ফোন-ট্যাবলেট ব্যবহার করে ইত্যাদি দেখা হয়েছে।
এছাড়া তার বোধশক্তি বা মানসিক ক্ষমতা পরীক্ষা করার জন্য তার ভাষা, স্মৃতিশক্তি, মনসংযোগ ইত্যাদির পরীক্ষা করা হয়।
দেখা গেছে – যে শিশুরা দু’ঘন্টার কম সময় ফোন-ট্যাবলেটের পর্দার সামনে কাটায়, ৯ থেকে ১১ ঘন্টা ঘুমায়, এবং কমপক্ষে এক ঘন্টা শারীরিক শ্রমসাধ্য কাজ করে – তাদের পারফরমেন্স, যারা এগুলো করে না তাদের চেয়ে ভালো।
তবে কানাডার ওএইচইও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ড. জেরেমি ওয়ালশ বলছেন, এ দুটি জিনিসের আদৌ সরাসরি সম্পর্ক আছে কিনা তা বের করতে আরো গবেষণা দরকার। তিনি বলেন, এমন কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণও যে ভিডিও গেম বা শিক্ষামূলক টিভি অনুষ্ঠান শিশুদের বোধশক্তির জন্য উপকারীও হতে পারে।
এর পর আসছে ‘স্ক্রিন টাইম’ কত হলে তাকে বেশি বলা যায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আসলে এটা অনেকটাই ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধির ব্যাপার।
ব্রিটেনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এরকম একটি জরিপ করা হয়েছে টিনএজারদের ওপর। সেখানে ১ লাখ ২০ হাজার কিশোরকিশোরী – যাদের বয়েস ১৫ তাদের ওপর জরিপটি চালানো হয়।
সেখানে আভাস পাওয়া যায়, শনি-রবিবার ছাড়া সপ্তাহের অন্য দিনে দু’ঘন্টার বেশি স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলে তাদের ভালো থাকার মাত্রা কমে যায়। শনি-রবিবার চার ঘন্টার বেশি স্মার্টফোন ব্যবহার করলেও তাই ।
কিন্তু গবেষকরা বলছেন এই তারতম্যের পরিমাণ খুবই কম – মাত্র ১ শতাংশ।
গবেষকরা অবশ্য এটাও বলেছেন যে এ দুটি জিনিসের আদৌ সরাসরি সম্পর্ক আছে কিনা তা বের করতে আরো গবেষণা দরকার। তার চেয়ে নিয়মিত খাবার খাওয়া, ঠিকমত ঘুমানোর সাথে ভালো থাকার সম্পর্ক তিন গুণ বেশি জোরালো।
অক্সফোর্ডের জরিপটির প্রণেতাদের একজন জীন টোয়েং বলছেন, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে স্ক্রিন টাইম কমানো উচিত, দিনে আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টার বেশি হওয়া উচিত নয়।
কিন্তু অন্য কিছু ব্যাপকভিত্তিক জরিপে এর সুনিশ্চিত প্রমাণ মেলেনি। তাই ব্যাপারটা – বলা যায় – এখনো জটিলই রয়ে গেছে।