ভারতে প্রার্থনা বা ধর্মসভা, মেলায় নিদারুণ ভীড়ে পদপিষ্ট হয়ে প্রায়শ মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ছবি : দ্য ক্রিস্টিয়ান সায়েন্স মনিটর
ভারতীয় ধর্মীয় উত্সবগুলিতে প্রায়শই মারাত্মক পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে, যেখানে ভিড় নিয়ন্ত্রণ বা নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ নানা সতর্কতার পরও ঠেকানো যায় না। অনেকে মনে করেন, এসব সতর্কতা সামান্যই। ব্যবস্থাপনাও দুর্বল। যেমনটা আজ মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশের হাথরাস এলাকায় পদপিষ্ট হয়ে অন্তত ১১২ জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বহুকাল ধরেই ভারতে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের সময় মন্দির কিংবা মাঠে ময়দানে, নদীর তীরে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রায়ই ঘটে। ২০১৬ সালে কেরালায় একটি মন্দিরে হিন্দুদের নতুন বছর উদ্যাপনের সময় আতশবাজির সময় ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এতে অন্তত ১১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
মধ্যপ্রদেশে ২০১৩ সালে একটি মন্দিরের কাছে সেতুতে পদদলিত হয়ে ১১৫ জন পুণ্যার্থীর মৃত্যু হয়। সে সময় সেখানে চার লাখের মতো মানুষ জড়ো হয়েছিল। গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল সেতুটি ধসে পড়বে, আর তখনই এই পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ২০০৮ সালেও রাজস্থানের যোধপুরে পদদলিত হয়ে ২২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
২০১৫ সালের জুলাই মাসে ভারতের রাজামুন্দ্রিতে গোদাবরী নদীর দিকে ধাবিত হওয়ার সময় অন্তত ২৭ জন নিহত এবং আরও ২৯ জন আহত হয়। মহা পুষ্করালু উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য হাজার হাজার উপাসক রাজামুন্দ্রিতে ছুটে আসেন, এটি একটি বারো দিনের উৎসব যা প্রতি ১৪৪ বছরে একবার হয়। পুস্কর উৎসবে অংশগ্রহণকারীরা নদীতে স্নান করে নিজেদেরকে পবিত্র করেন বলে দাবি করেন।
খবর অনুযায়ী, তীর্থযাত্রীরা নদীর তীরে হুড়োহুড়িতে পড়ে যাওয়া জুতাগুলি উদ্ধার করার চেষ্টা করার কারণেও পদদলিত হয়।
উত্সব-প্রেমীরা বিশ্বাস করেন যে নদীতে স্নান করলে পাপ ধুয়ে যায় এবং অনেকে বিশ্বাস করেন যে উত্সবের প্রথম দিনে স্নান করা আরও বেশি পুণ্যের।
২০১১ সালেও কেরালা রাজ্যে একটি উৎসবে শতাধিক লোক নিহত হয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে চামুন্ডা দেবী হিন্দু মন্দিরে পদদলিত হয়ে ২২০ জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল। সবচেয়ে প্রাণঘাতী পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল ২০০৫ সালে, যখন মহারাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যের মান্ধর দেবী মন্দিরে পদদলিত হয়ে প্রায় আড়াইশ জন লোক মারা গিয়েছিল।
ধর্মীয় উৎসবে মানুষের পদদলিত হওয়ার উপর পরিচালিত একটি সমীক্ষা ইঙ্গিত দেয় যে ভারতে ধর্মীয় জনসমাবেশ প্রায়ই গ্রামীণ এলাকায় সংগঠিত হয়, যার ফলে স্থানের অপ্রতুলতা এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতার কারণে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
ধর্ম জনসমাবেশের নিরাপত্তার অভাব, জনসমাবেশ করার পরিবেশগত দুর্বলতা এবং যথেষ্ট স্থান সংকুলান না হওয়াকেই অনেকে এই দুর্ঘটনার কারণ বলে দাবি করেন। এসব ধর্মীয় উৎসব, বিশেষ করে যখন প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে কিংবা এসবের পাদদেশে বা নদীর তীরে অনুষ্ঠিত হয়, তখন সেগুলোতে হুড়োহুড়ি বা আতঙ্ক ছড়ালে পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক থাকে না। তখন তীর্থযাত্রীদের হতাহতের ঘটনা বড় হয়ে উঠে। এসব ঝুঁকি নিয়ে বারবার কথা বলা হলেও সরকার বা কর্তৃপক্ষ তরফে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এভাবে বছরের পর বছর ধরে ভারতে ধর্মীয় সভায় পদদলিত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সরকারগুলোও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কৌশল নিয়ে ভাবে না বা ভাবলে তা খুবই অপ্রতুল। এ কারণে তারা এই প্রাণহানি ঠেকাতে ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে।