বিপুল জয় পেলেও বিপুল সাফল্য পাবেন কি স্টারমার?

প্রিয়দেশ ডেস্ক
6 July 2024 1:11 am
বিপুল জয় পেলেও বিপুল সাফল্যের আশা করছেন না বিশ্লেষকরা

কিয়ার স্টারমার বিপুল জয় পেলেও বিপুল সাফল্যের আশা করছেন না বিশ্লেষকরা। ছবি : সংগহীত

প্রিয়দেশ ডেস্ক

বিশ্বে যত দেশে নির্বাচন হয়, সেগুলোর মধ্যে বেশি নজর থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের দিকে। গতকাল হয়ে গেল যুক্তরাজ্যের নির্বাচন। নির্বাচনে ইতিহাস গড়ে বিজয় অর্জন করলো দেশটির লেবার পার্টি। বুথফেরত জরিপই সত্য হলো। জয়টাও প্রত্যাশিত ছিল। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৪১২টি আসনে জয় পেয়েছে দলটি। বড় ব্যবধান গড়ে তুলেছে কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে। এই পার্টি পেয়েছে ১২১টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ৩২৬ আসনে জয় প্রয়োজন ছিল।

লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি পেয়েছে ৭১টি আসনে জয়। লন্ডনে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার বলেছেন, পরিবর্তন এখন থেকেই শুরু হলো। উচ্ছ্বসিত জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দিত।’

যুক্তরাজ্যে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরে গেল কনজারভেটিভ পার্টি। বিদায় নিতে হলো প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে। তিনি পরাজয় মেনে নিয়েছেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা থেকে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।

এবারের নির্বাচনে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ৩৫টি রাজনৈতিক দল মাত্র। রেকর্ড ভেঙে এবার ৪ হাজার ৫১৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একেকটি আসনে গড়ে ৭ জন করে প্রার্থী। ৩১৭টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৫৯ জন।

যুক্তরাজ্যে এবারের সাধারণ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের মনোনয়নে প্রার্থী হন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক। এর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন কেউ কেউ। সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পরপরই গণনা শুরু হয়। নিয়ম অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দলকে সরকার গঠন ও দলের নেতাকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আহ্বান জানাবেন যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস। দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়া দল পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল হবে। আর দলটির নেতা প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা হবেন।

৯ জুলাই নতুন পার্লামেন্ট সদস্যদের শপথ গ্রহণ ও স্পিকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৭ জুলাই রাজা তৃতীয় চার্লসের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে নতুন সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে।

কে এই স্টারমার?

বিশ্ব রাজনীতিতে যে দেশগুলোর রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানদের ব্যাপারে আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকে সকলের, যুক্তরাজ্য তার মাঝে বেশ এগিয়ে। আমাদের মতো দেশের সকলেই চেনেন তাদের সাবেক জাঁদরেল প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল,মারগারেট থ্যাচার,জন মেজর,টনি ব্লেয়ার,বরিস জনসন বা সদ্য বিদায়ী রিশি সুনাককে। আর এ-ও আমাদের সকলেরই জানা যে যুক্তরাজ্যে ডানপন্থী কনজারভেটিভ বা টোরি পার্টি আর কিছুটা বামঘেঁষা লেবার পার্টির মাঝেই এই ক্ষমতার পালাবদল হয়। সে ধারাবাহিকতায় প্রায় ১৪ বছর পর লেবার পার্টি বিশাল ব্যবধানে জয়ের মুখ দেখল আর সে দলের প্রধান হিসেবে কিয়ার স্টারমারই হয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী।

কিয়ার স্টারমারের জন্ম রাজধানী লন্ডনে। ৬১ বছর বয়সী স্টারমার রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন মানবাধিকার আইনজীবী। যুক্তরাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউশন দপ্তরের পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

২০২০ সালের এপ্রিলে লেবার পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন স্টারমার। জেরেমি করবিনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। দায়িত্ব নিয়ে দলকে যুক্তরাজ্যের রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসেন স্টারমার। কয়েক বছরের মাথায় ভোটের লড়াইয়ে এর সুফলও পেলেন তিনি।

সমর্থকদের চোখে স্টারমার একজন বাস্তববাদী মানুষ। ভরসা করার মতো রাজনীতিবিদ। সমালোচকদের অনেকের মতে, স্টারমার চৌকস নন। বরং তিনি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়া একজন রাজনীতিক।

স্টারমারের আরেকটি পরিচয় আছে। তিনি রাজনীতির মাঠে যেমন সাড়া ফেলে দেওয়া মানুষ, তেমনই তিনি একজন দক্ষ ফুটবলারও। ক্লাব ফুটবলে আর্সেনালের ভক্ত তিনি। ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখায় ‘নাইট’ উপাধিও পেয়েছেন স্টারমার।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যম দ্য সান আয়োজিত এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে স্টারমার বলেন, ‘বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে যেসব মানুষ আসছেন, তাঁদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না কেন?’ কনজারভেটিভ সরকারের রুয়ান্ডা অভিবাসী প্রত্যাবাসন প্রকল্পের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিয়ে লেবার নেতা স্টারমারের এমন মন্তব্যে বিআরআই ও আইসিএসএফের ক্ষোভ প্রকাশ করে। স্টারমারের এমন মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি সম্প্রদায়। প্রতিবাদ জানানো হয়। এমন মন্তব্যে বিপাকে পড়েন এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরাও। এবার লেবার পার্টির আটজনসহ সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক ভোটে লড়েছেন।

তুমুল সমালোচনার মুখে সুর নরম করেন স্টারমার। তিনি বলেন, ‘আমি আসলে বাংলাদেশকে আলাদাভাবে বোঝাতে চাইনি। আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আমাদের দেশের প্রতি বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদানকে আমি ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করি।’

সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্টারমারকে ডাউনিং স্ট্রিটে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ভোটের আগে তিনি এক শব্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার করেছেন। তা হচ্ছে—পরিবর্তন।

জনগণের জন্য সরকারি সেবার মান কমে যাওয়া এবং জীবনযাত্রার মান নিয়ে মানুষের ক্ষোভকে বগলদাবা করেছেন স্টারমার। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনগণকে বলেছেন, লেবার পার্টি পরিবর্তন আনবে। তবে তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেন, তা বাস্তবায়ন করতে সমস্যা সমাধান শিগগিরই করে ফেলার কোনো জাদুমন্ত্র তাঁর কাছে নেই। ফলে বিপুল ভোট পেলেও বিপুল সাফল্য পাবেন— এমন প্রত্যাশা বিশ্লেষকরা করতে পারছেন না।