গণ-আন্দোলনে জয়ী হলেও জীবনযুদ্ধে হেরে গেলেন আব্দুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
14 November 2024 4:55 pm
আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট মাথায় গুলিবিদ্ধ হন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ। এরপর ছিলেন চিকিৎসাধীন। কিন্তু গণ-আন্দোলনে জয়ী হলেও জীবন যুদ্ধে হেরে গেলেন এই তরুণ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

২৩ বছর বয়সী আবদুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি যশোরের বেনাপোলে।

আবদুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার বলেন, “গত মাসের ১০ তারিখে সিএমএইচে তার অপারেশন করেন ডাক্তাররা। অপারেশন সাকসেসফুলও ছিল।

“অপারেশনের কয়েকদিন পর আমার ছেলে আমার সঙ্গে হেঁটে বেড়াইছে, আমার সঙ্গে খাবার খাইছে। ২০-২২ দিন আগে সে আবার অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। আজ সকালে একেবারে চলে গেল।”

আবদুল্লাহর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানোর কথা জানিয়েছেন ক্যান্টনমেন্ট থানার এসআই মনিরুজ্জামান।

ময়নাতদন্ত শেষের কথা জানিয়ে দুপুরে আবদুল্লাহর বাবা জব্বার বলেন, “মোহাম্মদপুরে তার গোসল করানো হচ্ছে। এরপর তাকে তার কলেজে নিয়ে যাব, সেখানে তার জানাযা হবে। বাদ মাগরিব শহীদ মিনারে জানাযা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাব, সেখানেই তার দাফন হবে।

সোহরাওয়ার্দী কলেজের কম্পিউটার অপারেটর শরীফুল ইসলাম বলেন, “আবদুল্লাহর মৃত্যুতে আমরা কলেজের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নোটিস করেছি। “আজ আসরের নামাজের পর কলেজ প্রাঙ্গণে ও মাগরিবের নামাজের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।”

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী মো. আব্দুল্লাহ শহীদ হয়েছেন। আজ মাগরিবের পর তার জানাজায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পক্ষ থেকে অনেকেই উপস্থিত থাকবেন।”

সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া আন্দোলনে আবদুল্লাহ সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। গণ আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দিন ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ।

প্রায় দুই-তিন ঘণ্টা রাস্তায় পড়ে থাকার পর প্রথমে তাকে মিটফোর্ড, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে রাতে অপারেশনের পর ডাক্তাররা তার ‘সুস্থ হওয়ার’ বিষয়ে আশ্বস্ত করেন। কয়েকদিন পর তাকে ছাড়পত্র দিলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে যায় পরিবার।

কিন্তু পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে এনে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২২ আগস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হলে সেখানেও তার অস্ত্রোপচার হয়। শেষ পর্যন্ত সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন আবদুল্লাহ।