অতি অল্প সময়ের মধ্যে অন্তবর্তী সরকারে নতুন চার উপদেষ্টাকে যুক্ত করা হলো। একইসাথে এই চার উপদেষ্টার শপথ নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দায়িত্বে বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন শপথ নেওয়া ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে পরিকল্পনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুরোনো উপদেষ্টাদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্বরাষ্ট্রের সাথে কৃষি মন্ত্রণালয়ও সামলাবেন। সামাজিক মাধ্যমে এম সাখাওয়াতের এই দপ্তর পরিবর্তন নিয়ে জোর আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, তার পদত্যাগ করা উচিৎ। কারণ, তিনি স্বরাষ্ট্রের জন্যই উপযুক্ত। অথচ তাকে এমন পদ দেওয়া হলো, যেন তাকে ওএসডি করা হলো।
অনেকে মনে করছেন, এম সাখাওয়াত উদারপন্থী কিছু বক্তব্য দিয়েছিলেন দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই। আওয়ামী লীগসহ অন্য দলগুলোকে দলগোছানোর মতো বক্তৃতা দিয়েছিলেন। এটি সরকারের ভেতরে অস্বস্তির সৃষ্টি করেছিল।
নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে আলী ইমাম মজুমদারকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পুরোনো উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহউদ্দিন আহমেদকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগে তাঁকে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে আইন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আদিলুর রহমান খানকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বও সামলাবেন।
মো. নাহিদ ইসলাম ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এ ছাড়া ফারুক-ই-আজম মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে ১৭ সদস্যের অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। শুক্রবার শপথ নেওয়া নতুন চার উপদেষ্টা তাঁদের সাথে যোগ দিলেন।
এর আগে এদিন বিকেল ৪টা ১১ মিনিটে বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন উপদেষ্টাদের শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।
এখন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, খাদ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্ব রয়েছে। অন্য উপদেষ্টাদের মধ্যে হাসান আরিফ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়; মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র; শারমিন এস মুরশিদ সমাজকল্যাণ; সুপ্রদীপ চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক; বিধান রঞ্জন রায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা; আ ফ ম খালিদ হোসেন ধর্ম; ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ; নুরজাহান বেগম স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন।
আওয়ামী লীগকে নিয়ে বক্তব্যই কাল হলো
দপ্তর বদলের প্রতিক্রিয়ায় ইতিমধ্যে বক্তব্য দিয়েছেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেছেন, এখন যেখানে দিয়েছে, সেখানে কাজ করতে পারলে করব, আর অপারগ হলে চলে যাব।
প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হওয়ার পর গত ১২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। ওইদিন আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়া আওয়ামী লীগকে গণ্ডগোল না পাকিয়ে নতুন মুখ নিয়ে দল গোছানোর পরামর্শ দেন তিনি।
দেশের জন্য আওয়ামী লীগের অবদানের কথা তুলে ধরে সাখাওয়াত হোসেন বলেছিলেন, এটা অনেক বড় পার্টি। আই হ্যাভ লট অব রেসপেক্ট ফর আওয়ামী লীগ। একসময় বাঙালিদের ভরসার জায়গা ছিল এই পার্টি। বায়ান্ন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনের অবদান ব্যক্তিগত কোনো কারণে নষ্ট করবেন না। এটা জাতীয় সম্পদ। আপনারা আসুন।
আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগকে বলব এমন কিছু করবেন না যাতে জীবন বিপন্ন হয়। আপনারা রাজনৈতিক দল হিসেবে দলকে গুছিয়ে নিন। নির্বাচন হলে অংশ নিন। জনগণ ভোট দিলে ভোটে যাবেন। তবে প্রতিবিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে হাজার-হাজার মানুষের রক্ত ঝরবে। সেইসঙ্গে ভারতে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরার পরামর্শ দিয়ে সাখাওয়াত হোসেন আরও বলেছিলেন, ‘আপনি ভালো থাকেন, আবার আসেন। আমরা সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু গণ্ডগোল পাকানোর মানে হয় না, এতে লাভ হবে না। বরং লোকজন আরও ক্ষেপে উঠবে।’
ওইদিন তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এক বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘উপদেষ্টাদের কেউ-কেউ খুনিদের পুনর্বাসন করার বক্তব্য দিচ্ছেন। আমি মনে করিয়ে দিতে চাই, ছাত-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন।’