গত ১৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালীরা যে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবং সেসব সম্পদের বেশিরভাগই পাচার করেছেন।
দেশের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রগুলোর খবরে বলা হচ্ছে, গত ১৫ বছরে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালীরা যে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তার বেশির ভাগই তারা বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের অন্তত ৭০ জনের বেশি মন্ত্রী-এমপি, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তার ওপর অনুসন্ধান চালিয়ে অর্থ পাচারের নজিরবিহীন এই চিত্র মিলেছে। এসব তথ্যের সত্যতা দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানেও পাওয়া গেছে।
তবে অর্থ পাচারকারীর তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ কত? এমন প্রশ্নের উত্তর মিলছে বৈশ্বিক একটি আর্থিক গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে। সংস্থাটি বলছে, গড়ে প্রতি বছর ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বের ছোট্ট এই দেশ থেকে! যার বড় একটি অংশই পাচার হয়েছে তথাকথিত ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের আড়ালে’। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, যে করেই হোক পাচার রোধ করতে হবে।
গত কয়েক বছর ধরেই ডলার সংকট, ভঙ্গুর অর্থনীতি, মূল্যস্ফিতিসহ নানাবিধা টানাপোড়েনে দেশের অর্থনীতি, যার অন্যতম কারণ অর্থপাচার। বৈশ্বিক বাণিজ্যভিত্তিক কারসাজি, হুণ্ডি, চোরাচালানসহ নানাবিধ পন্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে লক্ষাধিক কোটি টাকা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক অর্থিক খাতের গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্য বলছে, বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
শুধু ব্যক্তি উদ্যোগেই নয়, অর্থ পাচার প্রক্রিয়ায় পরোক্ষভাবে যুক্ত হয়েছে দেশের একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকও। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বলছে, গেল প্রায় দেড় যুগে দেশীয় ১৯টি ব্যাংকে আত্মসাৎ করা মাত্র ২৪টি ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমেই প্রায় একশ হাজার কোটিরও বেশি টাকা পাচার হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের জনপ্রিয় গন্তব্য ছিল সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, কানাডাসহ কিছু দ্বীপরাষ্ট্র। তবে গত কয়েক বছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বা পূর্ব ইউরোপের মতো দেশগুলোকে অর্থ পাচার করা হয়েছে।
যাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন : সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও এমপি সালমান এফ রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা: দীপু মনি, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী প্রমুখ।
ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্তাদের মধ্যে অন্যতম এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম মাসুদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও সাবেক ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারসহ ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা অর্ধশতাধিক জনের বিরুদ্ধে বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দুদকের হাতে রয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দেশ থেকে পাচারের টাকা সন্ধানে পাঁচ কৌশলে এগোতে চায় টাস্কফোর্স। এগুলো হচ্ছে আমদানি পণ্য এবং রপ্তানির মূল্য দেশে না আনা, আমদানি বা রপ্তানির ক্ষেত্রে মিথ্যা তথ্য, হুন্ডি ব্যবসার মাধ্যমে এবং অন্যান্য পন্থায় টাকা পাচার।
উপকরণগুলোর তথ্য সংগ্রহের পর বিশ্লেষণের মাধ্যমে শনাক্ত করা হবে দেশ থেকে কারা, কিভাবে টাকা পাচার করেছে। দ্বিতীয়ত, কোন কোন দেশে পাচার করেছে এবং পাচার করা সম্পদ কি অবস্থায় আছে।
পাচারের টাকা শনাক্ত ও দেশে ফেরাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষেত্রভেদে এর আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিএফআইইউ থেকে এগমন্ট গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কেও তথ্য চাওয়া হয়েছে।
তথ্য সংগ্রহের পর পাচারকারীর বিরুদ্ধে আরও বহুমুখী তদন্ত শেষে বিশদ প্রতিবেদন তৈরি হবে। এর ভিত্তিতে হবে মামলা।
মামলা পরিচালনায় দক্ষ আইনজীবী নিয়োগের পাশাপাশি সরকারি অন্যান্য সংস্থা থেকেও সহায়তা নিশ্চিত করা হবে। আদালতে পাচারের ঘটনা প্রমাণ করা গেলেই সেগুলো ফিরিয়ে আনার জন্য জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
পাচার করা সম্পদ দেশে ফেরত আনা এবং ওইসব সম্পদের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে সম্প্রতি পুনর্গঠিত টাস্কফোর্স এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এগোতে চায়।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর বাজার পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছিল। সে সময়কার দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের কারণে অনেক বড় ব্যবসায়ী গা ঢাকা দেওয়ায় পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়।
তারপর ওই বছরই দুই দফা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষি খাত। এসবের প্রভাবে মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ওঠে প্রায় ১৭ শতাংশে দাঁড়ায়।
খাদ্য আমদানির উদ্যোগ নিয়েও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়নি। নিত্যপণ্যের দামের এমন উত্থানে সে সময় জনরোষ বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে নির্বাচন দিয়ে সরে যেতে বাধ্য হয় এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকার।
দেড় দশকের মাথায় নিত্যপণ্যের বাজারে সে সময়কার পরিস্থিতিরই পুনরাবৃত্তি দেখা যাচ্ছে।
আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করে। ক্ষমতা গ্রহণের ১২ দিনের মাথায় দেশের মধ্য-পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় দেখা দেয় স্মরণকালের ভয়াবহ এক বন্যা।
এতে শুধু কৃষি খাতেই ক্ষয়ক্ষতি হয় অন্তত ৫০০০ কোটি টাকা, যা মোট ক্ষয়ক্ষতির প্রায় ৩৬ শতাংশ। এ বন্যার প্রভাব কাটিয়ে না উঠতেই চলতি মাসের শুরুতে আবার বন্যাক্রান্ত হয় শেরপুর, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ ও জামালপুর।
প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এ বন্যায় শুধু কৃষি খাতেই ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১০০ কোটি টাকার।
বর্তমানে দেশের নিত্যপণ্যের বাজারে দামের অস্থিতিশীলতা আরো জোরালো হয়ে উঠেছে। মোটা চাল, আটা, ডিম, মুরগি, সবজি, ইলিশ সবকিছুতে আগুন।
এক্ষেত্রে আলোচনায় আসছে বাজার ব্যবস্থাপনা ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের বিষয়টি। তবে গবেষকদের দাবি শুধু পণ্যের সরবরাহ সংকট নয়, অনিশ্চয়তাও বাজারকে অস্থির করে তোলে।
এ কারণে নিম্ন ও স্থির আয়ের পরিবারগুলো ব্যাপক সংকটের মুখে পড়েছে। এক রিকশাচালক উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, “”মাংস এবং মাছ ইতিমধ্যেই আমাদের জন্য অনেক দামী হয়ে গেছে। শাকসবজিও যদি অযোগ্য হয়ে যায়, তাহলে আমরা কী খাব?”
নতুন সরকার সবজির দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে উদাসীন বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। তাদের মতে, সরকার কাঁচা বাজারে কিছু অভিযান চালানো ছাড়া কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির জন্য গত কয়েকদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি এবং কিছু সবজি চাষী জেলায় আকস্মিক বন্যাকে দায়ী করলেও ভোক্তাদের অভিযোগ দাম বাড়ার পেছনে মূল কারণ সিন্ডিকেট।
সরকার ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙে না দিলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমবে না বলে ভোক্তারা মনে করেন। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, জুলাই-অগাস্টের আন্দোলনে হত্যার ঘটনায় বিচার কাজে গতি আনার লক্ষ্যে নানা উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে হাইকোর্টে ২৩ জন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই ট্রাইব্যুনালে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হতে পারে। এছাড়া ভবনের সংস্কার চলছে। কাজ এগিয়ে নিচ্ছে প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিচার প্রক্রিয়া।
ট্রাইব্যুনালে এরিমধ্যে ৪৫টি এবং তদন্ত সংস্থায় ১৬টি মিলে মোট ৬১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। বেশিরভাগ অভিযোগই আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও পুলিশের সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। যাদের একটি বড় অংশ দেশত্যাগ করেছে।
এক্ষেত্রে এই বিচার কার্যক্রমে প্রধান দুই চ্যালেঞ্জ হলো: অপরাধের যে আলামতগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো একত্রিত করা। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশত্যাগ করা পলাতক আসামীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে ২০১৩ সালে। শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে হওয়া এই বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমেই তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সরকার পতনের পর হঠাৎ করেই যেন বেড়ে চলছে সামাজিক অস্থিরতা। রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি দিনে দুপুরে ঘটছে ছিনতাই ও নারী হেনস্তার ঘটনা।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলছে নীরব চাঁদাবাজি, দখল। নানা অজুহাতে তৈরি হচ্ছে শ্রমিক অসন্তোষ। অশান্ত হয়ে উঠছে পাহাড়।
মাঝে মাঝেই দেশের বিভিন্ন স্থানে গণপিটুনিতে নির্মম মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা চলছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একটি মহল বিরামহীনভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে পরিস্থিতি অশান্ত করতে। পার্শ্ববর্তী একটি দেশ সেটাকে উসকানি দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিমত তাদের।
মানবাধিকারকর্মী ও অপরাধ বিশ্লেষক নূর খান বলেন, সাবেক স্বৈরাচার সরকার পালালেও তাদের অনুচরেরা রয়ে গেছে। তারা সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে।
তবে, অভিযোগ রয়েছে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় দুর্বৃত্তদের অনেকে বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের কর্মী বা কিছু জায়গায় সমন্বয়ক বলেও নিজেদের জাহির করছে।
অপরাধ বিশ্লেষক এবং একাধিক সংস্থার কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে পুলিশের অনুপস্থিতি, সরকার পরিবর্তনের পর পূর্ববিরোধ, দখলবাজি, আইনকে তোয়াক্কা না করা, রাজনৈতিক বিরোধসহ সামাজিক নানান বিরোধের জেরে আরও অনেক কারণে খুনের ঘটনা ঘটছে।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ সরকারি সব দফতরেই ব্যাপক রদবদল হয়েছে। পুনর্গঠন হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ধারাবাহিকতায় অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়েও ঘটে গেছে বড় পরিবর্তন। কিন্তু নিম্ন আদালত চলছে আগের মতোই।
পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ আইন কর্মকর্তা আদালতের কাজে অংশ নিচ্ছেন না। এতে বিচার-প্রার্থীদের ভোগান্তি যেমন বাড়ছে, তেমনি মামলার জট বাড়ছে আদালতে।
ঢাকাসহ কয়েকটি জেলা আদালতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া সরকারি আইন কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই আদালতে যাচ্ছেন না।
যে কারণে বারবার মামলার তারিখ পরিবর্তন করছেন আদালত। অনেক আসামি জামিন পাওয়ার যোগ্য হলেও জামিন মিলছে না। আবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা না থাকায় অনেক আসামি সুবিধা নিয়ে জামিনে বের হয়ে যাচ্ছেন। এতে মামলার বাদী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন
নতুন পিপি-জিপি নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন আদালতে এই অচলাবস্থা কাটবে না বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। এজন্য তারা বিচারিক আদালতে দ্রুত আইন কর্মকর্তা নিয়োগের দাবি জানান।
নতুন আইন কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের অধীন সলিসিটর অনুবিভাগ (উইং)। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইতিহাসের সর্বোচ্চ পরিমাণ খেলাপি ঋণ রেখে গেছে আওয়ামী লীগ সরকার। খেলাপি ঋণের পরিমাণ দুই লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
ছয়টি ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বিতরণ করা মোট ঋণের ৫০ শতাংশ ছাড়িয়েছে।
ব্যাংকগুলো হলো, সরকারি খাতের বেসিক ও জনতা ব্যাংক এবং বেসরকারি খাতের বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক।
ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান নামে একটি বিদেশি ব্যাংকও খেলাপি ঋণের তালিকায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৫-১৬ সালের পর নিয়মনীতি উপেক্ষা করে কিছু গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানকে নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে এসব ব্যাংক। ফলে ব্যাংকগুলো এখন অস্তিত্বের সংকটে রয়েছে। এখনই সিদ্ধান্ত না নিলে সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ব্যাংক খাতের সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। অনেকগুলো ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্স নিরীক্ষা করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল করার চেষ্টা করবে। একীভূত করাও যেতে পারে, না হলে বিলুপ্ত করতে হবে।