দেশে জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় কমপক্ষে ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। এরকম একটি তালিকা প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে ওই তালিকা প্রকাশ করে এক বার্তায় বলা হয়েছে, আমরা লক্ষ্য করেছি যে কিছু নিউজ আউটলেট এবং কিছু ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে হওয়া গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা সম্পর্কে মিথ্যা এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে নিহত পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকৃত তালিকা এখানে দেওয়া হল। পুলিশ সদর দপ্তর এই তালিকা প্রকাশ করেছে।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর বলছে, যেসব অফিসার বা কনস্টেবল প্রতিবাদ বা সহিংসতার ঘটনায় আহত বা নিহত হন, পুলিশ বিভাগ ‘অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে; তাদের তালিকা রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। এ তালিকার বাইরেও পুলিশ নিহতের কোনো ঘটনার কথা কেউ দাবি করলে পুলিশ সদর দপ্তরে প্রমাণ সরবরাহের আহ্বান জানানো হয়েছে ওই বার্তায়।
এর আগে গত ১৪ আগাস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের এক বার্তায় ৪৪ পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার তথ্য দিলেও সে সময় নিহতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়নি।শুক্রবার প্রকাশিত তালিকায় নিহতদের নাম, পদের নাম, মৃত্যুর তারিখ, সংযুক্ত ইউনিটের নাম এবং ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে তিনজন পরিদর্শক, ১১ জন এসআই, ৭ জন এএসআই, একজন এটিএসআই, একজন নায়েক ও ২১ জন কনস্টেবল রয়েছেন। তাদের মধ্যে ডিএমপির ১৪ জন, এনায়েতপুর থানার ১৫ জন, সোনাইমুড়ী থানার ২ জন, তিতাস থানার ২ জন, কচুয়া থানার একজন, বানিয়াচং থানার একজন, ঢাকা এসবির একজন, নারায়ণগঞ্জ পিবিআইয়ের একজন, ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের একজন, কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশের একজন, কসবা থানার একজন, খুলনা মহানগর পুলিশের একজন, গাজীপুর মহানগর পুলিশের একজন এবং ঢাকা জেলার ২ জন পুলিশ সদস্য ছিলেন।
সবচেয়ে বেশি, ২৪ জন পুলিশ মারা গেছেন ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনার ক্ষমতা ছাড়ার দিন। তার আগের দিন ৪ আগস্ট মারা গেছেন ১৪ জন। বাকিরা নিহত হয়েছেন বিভিন্ন সময়ে।
নিহত তিন পুলিশ পরিদর্শক :
মো. আব্দুর রাজ্জাক, রাশেদুল ইসলাম ও মো. মাসুদ পারভেজ ভূইয়া। নিহত ১১ জন এসআই: সুজন চন্দ্র দে, খগেন্দ্র চন্দ্র সরকার, রেজাউল করিম, মো. মামুনুর রশিদ সরকার, বাছির উদ্দিন, রইস উদ্দিন খান, তহছেনুজ্জামান, প্রণবেশ কুমার বিশ্বাস, মো. নাজমুল হোসাইন, আনিসুর রহমান মোল্লা ও সন্তোষ চৌধুরী। নিহত ৭জন এএসআই হচ্ছেন সঞ্জয় কুমার দাস, ফিরোজ হোসেন, সোহেল রানা, রাজু আহমেদ, ওবায়দুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, মো. মোক্তাদির।
নিহত ২১ পুলিশ কনস্টেবল :
মো. আব্দুল মজিদ, রেজাউল করিম, মাহফুজুর রহমান, শাহিদুল আলম, মো. আবু হাসনাত রনি, মীর মোনতাজ আলী, সুমন কুমার ঘরামী, মোহাম্মদ আব্দুল মালেক, মোহাম্মদ ইব্রাহিম, মো. আব্দুস সালেক, মো. হাফিজুল ইসলাম, মো. রবিউল আলীম শাহ, মো. হুমায়ুন কবীর, মো. আরিফুল আযম, মো. রিয়াজুল ইসলাম, মো. শাহিন উদ্দিন, মো. এরশাদ আলী, মাইনুদ্দিন লিটন, মো. সুজন মিয়া, মো. খলিলুর রহমান ও মো. হানিফ আলী।
কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকার পতন আন্দোলন ঘিরে গত জুলাই মাসের দ্বিতীয়ার্ধ এবং আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ বাংলাদেশ ছিল অগ্নিগর্ভ। সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ওই আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে সরকার পতনের এক দপা আন্দোলনের রূপ নেয়। ৫ অগাস্ট আন্দোলনকারীদের ঢাকামুখী লং মার্চের মধ্যে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে চলে যান।
এরপর বিভিন্ন থানা, আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতাকর্মীদের বাড়ি, হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করা হয়। আন্দোলনের মধ্যে জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহে কয়েকশ মানুষের প্রাণহানির তথ্য আসে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর জুলাই-আগস্টে নিহত এবং আহতদের তালিকা তৈরি করতে গত ১৫ আগস্ট স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির সবশেষ হালনাগাদে ২৫ অক্টোবর নিহতের সংখ্যা ৮৬৩ জন বলে জানানো হয়।
২০ অক্টোবর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, স্বৈরাচারবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ‘শহীদের’ সংখ্যা দুই হাজারের বেশি। আর আহত মানুষের সংখ্যা ৪০ থেকে ৫০ হাজার। হতাহত পুলিশ সদস্যদের সংখ্যা এখানে ধরা হয়নি।