৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তার ভারতে আশ্রয় নেওয়া ছিল স্বাভাবিকই। এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে তাকে দেশে প্রত্যর্পণের ‘অনুরোধ’ বা ‘দাবি’টা যে আসবে তা-ও একরকম জানাই ছিল। অবশেষে সেটা এলোও, শেখ হাসিনার ভারতে পদার্পণের ঠিক চার মাস ১৮ দিনের মাথায়!
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার একশো দিন অতিক্রম করেছে। এ নিয়ে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে একটি সুদীর্ঘ ভাষণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ওই ভাষণে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সমর্থন মিলেছে।
ভারতে আশ্রিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করতে রেড অ্যালার্ট জারির জন্য আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়। সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড নিয়ে কোন প্রশ্ন না করার বিধান রেখে নতুন একটি অধ্যাদেশ জারির প্রক্রিয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ, ২০২৪’ শিরোনামে এর খসড়ায় সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে একটি টুইট করেছেন। সেই টুইট নিয়ে বাংলাদেশ মূলত মার্কিন নির্বাচনে ঢুকে গেল। বাংলাদেশে ট্রাম্পের টুইট নিয়ে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকে বলছেন, ট্রাম্প জিতলে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস বেকায়দায় পড়বেন।
শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংবিধানে ‘ফিরছে’ নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা। তবে সেটি বিলুপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার-এর নামে ফিরবে, নাকি নির্বাচনকালীন সরকার হয়ে আসবে– তা এখনও পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার প্রক্রিয়া গঠিত কমিটির মাধ্যমে হবে, নাকি আদালতের রায়ে ফিরবে– সেটিও অস্পষ্ট।
দায়িত্ব গ্রহণের পর যেসব সংস্কারের কথা বলা হয়েছিল তা বাস্তবায়নে ধীর গতির কারণে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার। এছাড়াও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি কিংবা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
বাংলাদেশে গণআন্দোলনের আগে পরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার যে খবর প্রচার করা হচ্ছে, সেই ঘটনা ‘অতিরঞ্জিত’ করে কেউ কেউ প্রচার করছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এ কথাই জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করে এলেন গত বুধবার ১০ জুলাই। পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী, সফর শেষে বৃহস্পতিবার ঢাকায় ফেরার কথা থাকলেও সরকারপ্রধান বুধবার রাতেই ফিরে আসেন। বহুল আলোচিত সেই সফরের প্রাপ্তি কতটা হয়েছে সেটি নিয়ে এখন চলছে নানা আলোচনা, বিচার বিশ্লেষণ। চীন সফরে যাবার কিছুদিন আগ থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম এবং কর্মকর্তারা ধারণা দিয়েছিলেন, এই সফর হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গত মাসেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে রাষ্ট্রীয় সফর করে এলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৮ জুলাই গেলেন চীনে। টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটা তাঁর দ্বিতীয় চীন সফর। ভারত সফরে শেখ হাসিনা রেল ট্রানজিটসহ বিভিন্ন বিষয়ে দশটি সমঝোতা স্মারক সই করে এসেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত সফরের দুই সপ্তাহ পর প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক, উভয়দিক থেকেই বাংলাদেশের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ।