Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the all-in-one-seo-pack domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/priodesh/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121

Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the sharethis-share-buttons domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/priodesh/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
রোহিঙ্গা সঙ্কটে জাতিসংঘ ব্যর্থ কেন? - Priodesh

রোহিঙ্গা সঙ্কটে জাতিসংঘ ব্যর্থ কেন?

27 June 2024 12:08 pm

বি শ্লে ষ ণ

১৯৪৫ সালে জন্মের পর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার আট দশক হয়ে গেছে। সময়ের হিসেবে দীর্ঘ এক সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে শান্তি রক্ষা, যুদ্ধ বন্ধ এবং অপরাপর যেসব লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার কতোটা পূরণ করতে পেরেছে এই বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানটি?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর যেখানে যুদ্ধ-সহিংসতা থামার কথা সেখানে প্রতিবছর ক্রমশ সহিংসতা-যুদ্ধ বেড়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালে পরিচালিত এক গবেষণা হতে দেখা যায়, ১৯৪৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রতি দশকে ৫০ এর অধিক সহিংসতা-যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। অথচ, ১৯৪৫ জাতিসংঘ সনদ অনুসারে, ভবিষ্যত প্রজন্মকে যুদ্ধের অভিশাপ থেকে মুক্ত রাখা জাতিসংঘের অন্যতম উদ্দেশ্য। জাতিসংঘ এই ভূমিকা পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে একথা বলা যাবে না। জাতিসংঘের উদ্দোগে বিশ্বে বেশ কয়েকটি সঙ্কট সমাধান হয়েছে। যা সমাধান হয়েছে তা আলোকপাত করার কিছু নেই। বরং যা সমাধান করা হয়নি তাই আলোচনা করার বিষয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর পর বিশ্বজুড়ে ইউরোপীয় উপনিবেশগুলো ধ্বসে পড়তে থাকে। একের পর এক দেশ স্বাধীন হতে থাকে। এবং একইসঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে তৃতীয় বিশ্বের এসব দেশই হয়ে উঠতে থাকে নতুন যুদ্ধ-সহিংসতার নতুন ক্ষেত্র। এর কারণ হিসেবে গবেষকরা বলছেন, বৈশ্বিক শক্তিগুলো পারমাণবিক এবং অন্যান্য উন্নত অস্ত্রের অধিকারী হওয়াকে। এর ফলে এসব দেশ এখন আর নিজেদের মধ্যে সরাসারি যুদ্ধে না জড়িয়ে নিজেদের যুদ্ধ অন্য দেশে টেনে নিয়ে যায়। তৃতীয় বিশ্বের দিকে তাকালেই এর প্রমাণ পাওয়া যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার মধ্যকার স্নায়ুদ্ধের বলি হয়েছে কিউবা, আফগানিস্তান, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশ।

বিশ শতকের শেষ দশকে রাশিয়া ভেঙে গেলে সেই স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাব অনেকটা স্তিমিত হয়ে এলেও ইদানীং আবার নতুন করে মাথাচাড়া দিয়েছে। সিরিয়া, তুরস্ক, আফগানিস্তানে চলমান ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলে এটি প্রমাণিত হবে যে, এখনো নতুন করে একধরণের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে রাশিয়া-চীন-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। তারই জের ধরে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে এখনো একাধিক সহিংসতা এবং যুদ্ধ চলমান।

উদাহরণ হিসেবে আমার আমলে নিতে পারি ১৯৪৮ সাল থেকে চলমান কাশ্মির সঙ্কট, একই বছর থেকে চলমান ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সঙ্কট, সোমালিয়া সঙ্কট, ইরাক যুদ্ধ, সিরিয়ায় সংকট এবং রোহিঙ্গা সঙ্কট। তালিকা আরো দীর্ঘ করা যায়। আপাতত এই থাকুক।

উপরোক্ত প্রত্যেকটি সঙ্কট-সহিংসতা সমাধানের সুযোগ জাতিসংঘ পেয়েছে কিন্ত সেগুলো কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছে।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সূত্রপাত জাতিসংঘের জন্মের বেশ পরে। ফলে এই সঙ্কট সমাধানে জাতিসংঘ যথেষ্ট সময় পেয়েছে। কিন্তু তারপরও কেন বৈশ্বিক এই সংস্থাটি রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে ব্যর্থ হলো?

বিবিসির এক প্রতিবেদনে (২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭) বলা হয়, যখন রোহিঙ্গা মুসলিমরা নিজেদের জন্মস্থান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছিল প্রাণ বাচাতে সেসময় জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের তাদের দেশে রাখার পরিবর্তে বাংলাদেশে যেতে দিয়ে তাদের মানবিক সহায়তার দিকে নজর দিয়েছে। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো জাতিসংঘ ২০১৭ সালে যে দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট দেখেছে এখনো সেই একই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আছে। কেননা, রোহিঙ্গাদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। বরং উল্টো তারা কক্সবাজার থেকে রোহিঙ্গাদের নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যাপারে অনীহা প্রদর্শন করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিতে এসেছে যে, তারা ভাসানচরেও উখিয়া ক্যাম্পের মতো মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।

বিষয়টি আমলে নেওয়ার মতো। কেননা, যেখানে জাতিসংঘের মতো একটি বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান শরণার্থীদের যেখানে তাদের নিজের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে সেখানে তারা প্রায় দশ লাখ শরণার্থীকে বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে রেখে বাংলাদেশের ওপর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক চাপের মুখে ফেলছে।

কেন এই ব্যর্থতা? এর পেছনে কি কি কারণ বিদ্যমান?

বিবিসির পূর্বোক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গা ঢল নামার চার বছর আগেই এই বিষয়গুলো থামানোর সুযোগ পেয়েছিল। কেননা, তখনই মিয়ানমারের সরকার রাখাইনের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সকল প্রকার মানবিক সহায়তার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছিল। সেসময় মিয়ানমারে জাতিসংঘের দূত রেনাটা লক ডেসালিয়ন রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নির্মূলীকরণ অভিযান চালানো হতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন। সেসময় জাতিসংঘ যেমন জোরালো ভূমিকা নেয়নি। একইসঙ্গে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক নেত্রী বলে পরিচিত অং সান সু চির ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। সেসময় মিয়ানমারে সামরিক সরকার সু চির প্রতি অনেকটা নমনীয় থাকলেও সু চি সেসময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে নীরব সমর্থন দিয়েছেন।

রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ করার সময় এবং এর আগে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল নীরব। সেসময় জাতিসংঘের ভূমিকা খুঁজতে গিয়ে গুয়েতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী গার্ট রোজেনথাল ২০১৯ সালে ৩৬ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সেই প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে ‘সিস্টেমেটিক অ্যান্ড স্ট্রাকচারাল ফেইলিয়র’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

রোজেনথাল তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ঘটনার পর পরই পরিস্থিতির ‍উন্নয়নে জাতিসেংঘের পক্ষ থেকে কোন তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। রোজেনথাল তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, ২০১০ সাল থেকে জাতিসংঘ মিয়ানমারে জড়িত। ২০১০ সালের পর থেকে মিয়ানমারের সামরিক সরকার একদিকে যেমন রাখাইনে সামরিক শক্তি বাড়াতে থাকে পাশাপাশি তারা দেশকে গণতন্ত্রের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। রাজনৈতিক দলগুলোকে কাজ করার সুযোগ দেয়, মুক্তবাজার অর্থনীতি গ্রহণ করে। কিন্তু সেটা যে আইওয়াশ ছিল মাত্র তা না বললেও চলে। কেননা মিয়ানমারে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে নেয়। এবং রোহিঙ্গাসহ অন্য ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নির্মূল করণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শেষ চেষ্টা হিসেবে মিয়ানমারের সামরিক সরকার দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে সেনা সমাবেশ করছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। ফলে পরিস্থিতি যা ছিল তাই থাকছে।

রোজেনথাল তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, জাতিসংঘের যে সিস্টেম তাই মূলত এর স্বাধীনভাবে কাজ করার এবং শক্তিশালী হয়ে উঠার অন্তরায়। যার ফলে জাতিসংঘ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কোন শক্তিশালী ভূমিকা নিতে পারেনি। এখানে রোজেনথাল এবং ইংল্যান্ডের ম্যাকালিস্টার কলেজের গবেষক নিল গার্ডিনারের গবেষণা আমলে নিতে পারি। দুজনই তাদের আলোচনায় বলেছেন, জাতিসংঘের ব্যার্থ হওয়ার পেছনে এই সংস্থার কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত অনীহা এবং এর নেতৃস্থানীয় সদস্য দেশগুলোর রাজনৈতিক স্বার্থ কারণকে দায়ী করেছেন। কর্মকর্তাদের অনীহার কারণ হিসেবে দুজনেই জাতিসংঘের ‘সিস্টেম’কে দায়ী করেছেন।

তবে জাতিসংঘের ব্যর্থতার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, এর নিরাপত্তা পরিষদ। এই দেশগুলো তাদের স্বার্থ যেখানে জড়িত সেখানে তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিষয়ে চুপ থেকেছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজি ছিল ভারত মহাসাগরে চীনকে বাঁধা দেওয়া এবং সেকাজে মিয়ানমারকে তাদের পক্ষপুটে টানা। কিন্তু সে চেষ্টা তারা করেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে পাশ কাটিয়ে অং সান সু কিকে দিয়ে। তাদের সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে সেটা বলাই বাহুল্য। যুক্তরাষ্ট্রকে এই জায়গায় হারিয়ে দিয়েছে চীন। তারা মিয়ানমারে নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করেছে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করে। নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া বাদে বাকীরা কোন না কোনভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। তারা তাদের কৌশলগত মিত্রেরে সঙ্গে দ্বিমত কবে এমন নয়। আবার রাশিয়া মিয়ানমারে অন্যতম অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ। ফলে কোন না কোন কারনে ফলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা তাদের স্বার্থ দেখেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে চুপ থেকেছে। অপরদিকে, সাধারণ পরিষদে ভোটাভুটিতেও এই বিষয়ে কোন রেজুলেশন পাস করাতে পারেনি। ফলে, সামগ্রিক বিচেনায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ অভ্যন্তরীণভাবে এবং বাহ্যিকভাবে বিভিন্ন নেতৃত্বস্থানীয় দেশগুলোর স্বার্থের কাছে হার মেনে গেছে।

যাইহোক, জাতিসংঘের এই ধরণের ধারাবাহিক ব্যর্থতা তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা কমাবে। যা একে ভবিষ্যতে আরো অকার্যকর এবং নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারে। একেও এর পূর্বসূরী লীগ অব নেশনস বা জাতিপুঞ্জের ভবিষ্যত বরণ করতে পারে।